বালুরঘাট: কয়েকদিন ধরেই ঘটে চলেছিল নানা অদ্ভূতুড়ে কাণ্ড। কোনও সময় বাড়ির ছাদে পড়ছিল ঢিল। কোনও সময় বা বাড়ির কড়া নাড়ার শব্দ। বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী থাকলেও কার্যত একা থাকেন স্ত্রী। ভূত যে নয়, এই কাজ যে কোনও দুষ্টু বা দুষ্টুদের কীর্তিকলাপ তা তিনি অনুমান করেন। তাই সাহস করেই গভীর রাতে বাড়ির দরজায় টর্চ হাতে এসে দাঁড়ান তিনি। কেউ বা কারা গেলেই মুখে টর্চের আলো ফেলে চেনার চেষ্টা করছিলেন ওই গৃহবধূ। কিন্তু, হিতে বিপরীত হয়ে যায়। দুই তরুণের মুখে টর্চের আলো ফেলতেই তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আর এই অপরাধেই ওই মহিলাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই দুই তরুণের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ তোলেন ওই মহিলা।
মারধরের জেরে রক্তাক্ত ওই গৃহবধূকে বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অভিযোগ পেতেই বালুরঘাট থানার পুলিশ মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বালুরঘাটের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ওই মহিলার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। ছেলেও ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছেন। একাকী বসবাস করা এক গৃহবধূর বাড়িতে প্রায়শই ঢিল ছোড়া হয়, দরজায় ধাক্কা দেওয়া হয়। এমনই ঘটনা ঘটে চলেছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। প্রতিবেশীদের জানিয়েও এর কোনও প্রতিকার খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। সাহস করে একা একা এই সমস্যার সমাধান করতেও তিনি ঘরের বাইরে বেরোতে চাইতেন না। কিন্তু শুক্রবার রাতে ফের এমন কাণ্ড ঘটতেই সাহস করে ওই গৃহবধূ ঘরের বাইরে বেরিয়ে টর্চের আলো ফেলতেই প্রতিবেশী দুই তরুণকে দেখতে পান। আর তাদের মুখে কেন টর্চার আলো ফেলা হল এই নিয়ে ওই গৃহবধূর সঙ্গে বিবাদ জুড়ে দেন প্রতিবেশী ওই দুই তরুণ। বচসার মাঝেই ওই দুই তরুণ ওই গৃহবধূকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁর পরনের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই বধূ। চিৎকারে প্রতিবেশীরা এলে ওই তরুণরা তাঁকে ছেড়ে দেয়।
এদিন ওই গৃহবধূ বলেন, ‘স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন বলে বাড়িতে থাকে না। ছেলেও বাড়িতে নেই। একাই আমি বাড়িতে থাকি। কিন্তু কিছুদিন ধরেই আমার বাড়িতে নানা ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটছে। রাত হলেই ঢিল পড়ছে, দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। সারারাত আতঙ্ক নিয়ে ঘরে শুয়ে থাকি। গতকাল সাহস করে টর্চ নিয়ে দরজার বাইরে বেরোতেই দু’জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখি। তাদের মুখে আলো ফেলি চেনার জন্য। আর এই অপরাধেই আমাকে মারধর করা হয়। আমার পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে, আমার শ্লীলতাহানি করে। আমি সুবিচার চেয়ে বালুরঘাট থানার দ্বারস্থ হয়েছি। বালুরঘাট থানার আইসি সুমন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে।’