সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: বাবা কে? ভয়ে বা সংশয়ে উত্তর দিতে পারছিল না বছর পনেরোর নাবালিকা। সদ্য মা হয়েছে সে। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বালুরঘাট হাসপাতালে পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলেও।
আর ওই নাবালিকার গর্ভধারণ হওয়ার পরেও কেন তার পরিবার চুপ ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওই নাবালিকা বিষয়টি নিয়ে চুপ রয়েছে কেন? তার ভেতর কোনও ভয় রয়েছে কি না, সে সব দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ধর্ষিত হয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠছে। সন্দেহের তির ওই নাবালিকার সৎবাবার দিকেও উঠছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার সৎবাবাকে আটক করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ। পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান মন্দিরা রায়ের বক্তব্য, ‘এটি একটি পকসো মামলা। ওই নাবালিকা প্রসূতি একটু সুস্থ হলে, তার সঙ্গে কথা বলে পুরো ঘটনা জানা যাবে। আমরা পুরো বিষয়টির ওপর নজর রেখেছি।’ ডিএসপি সদর বিক্রম প্রসাদ বললেন, ‘এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’
নবম শ্রেণির ওই অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে গতকাল রাতে লুকিয়ে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসে তার পরিবার। আর এরপরেই বিষয়টি জানাজানি হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফেই বালুরঘাট থানা ও প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। শুরু হয় তদন্ত। পাশাপাশি ওই নাবালিকা একটি পুত্রসন্তানও জন্ম দেয় বালুরঘাট হাসপাতালে। বর্তমানে মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কিন্তু ওই সদ্যোজাত সন্তানের পিতা কে? এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রাণসংশয়েই ধর্ষণের কথা চেপে যাচ্ছে কি না ওই নাবালিকা, সেদিকেও নজর রেখেছে প্রশাসন। পরিবারের সদস্যরাও যেমন এ নিয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন, তেমনি ওই নাবালিকাও এবিষয়ে একেবারে চুপ করে গিয়েছে।
ওই নাবালিকার বাবা মারা গিয়েছেন। মা ইসলামপুরে কর্মসূত্রে থাকেন। সেখানে একটি হোটেলে রান্নার কাজ করেন। বছর দেড়েক আগে বালুরঘাটের এক তরুণকে ওই মহিলা বিয়ে করেন। নিজে ইসলামপুরে থাকলেও, তাঁর নাবালিকা মেয়ে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তাঁর স্বামী বালুরঘাটের বাড়িতেই থাকেন। ওই নাবালিকা গর্ভধারণ করার পরেও তার পরিবার তাকে লুকিয়ে রাখা ও ওই নাবালিকার এ নিয়ে কোনও কথা না বলায়, স্বাভাবিকভাবেই তার সৎবাবার দিকে প্রাথমিক সন্দেহের তির গিয়েছে। সদ্য নানা প্রচার সত্ত্বেও দক্ষিণ দিনাজপুরে নাবালিকাদের গর্ভধারণের পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন সমাজকর্মী সুরজ দাশ।
প্রশাসন জানিয়েছে, হাজার সচতেনতা প্রচার সত্ত্বেও, দক্ষিণ দিনাজপুরে ২০ থেকে ২২ শতাংশ নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ছে। চলতি সপ্তাহে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির নজরদারিতে থাকা এক নাবালিকার প্রসব করাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কুশমণ্ডির বাসিন্দা ওই নাবালিকা প্রশাসনিক নজরদারি এড়িয়েই সন্তান প্রসব করায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল প্রশাসনিক কর্তাদের কপালে। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবারে খোদ বালুরঘাট শহরের এমন এক নাবালিকা ছাত্রীর প্রসবের ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।