সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: আশঙ্কা উড়িয়ে, বালুরঘাটের মাহিনগরের প্রস্তাবিত জমিতে ভবন গড়ার আর্জি নিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হলেন দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য। ইতিমধ্যে ওই জমিতে প্রাচীর নির্মাণের কাজ হয়ে রয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দর ঘেঁষা ওই জমিতে ভবন নির্মাণে সমস্যা রয়েছে বলে প্রচার চালিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে সরব হয়েছিলেন বালুরঘাটের বুদ্ধিজীবীরা।
জেলা সদর বালুরঘাটেই থাকবে তো দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়? এই প্রশ্নই উঠে গিয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় বালুরঘাটের ওই মাহিনগরের জমিতে করা হবে বলে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে জানিয়ে দিলেন উপাচার্য প্রণব ঘোষ। পূর্ত দপ্তরের কাছে পাওয়া ডিপিআর এবং প্রায় ৪০ কোটির আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন তিনি।
যাবতীয় উদ্যোগের প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘মাহিনগরে প্রস্তাবিত জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভবন গঠনে কোনও জটিলতা নেই। তাই আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। পাশাপাশি নতুন বিষয় চালুর জন্যও চিঠি দিয়েছি।’
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বালুরঘাটের নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আপাতত ব্যবহার করতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে বর্তমানে চালু থাকা তিনটি বিষয় অংক, ইংরেজি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বাড়িয়ে আরও নতুন পাঁচটি বিষয়কে বাংলা, সংস্কৃত, কেমিস্ট্রি, এডুকেশন, ফিলোজফিকে সংযুক্ত করতে চেয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে আবেদন করেছেন উপাচার্য। নতুন উপাচার্যের এমন উদ্যোগে খুশি বালুরঘাটের শিক্ষানুরাগী মহল।
দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বালুরঘাটে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবি মেনে ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গঙ্গারামপুরে নাকি বালুরঘাটে তৈরি হবে, সেই জমি চিহ্নিতকরণ নিয়ে বিপ্লব মিত্র বনাম অর্পিতা ঘোষের এক অভূতপূর্ব লড়াই দেখেছে দক্ষিণ দিনাজপুর।
শেষ পর্যন্ত বালুরঘাটের মাহিনগরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জমি চিহ্নিত ও চূড়ান্ত করা হয়। সেই যাত্রায় অর্পিতা ঘোষ জয়ী হলেও, কোনও এক অদৃশ্য কারণে এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজই আর এগোইনি। তা জমিই হোক বা ভবন নির্মাণ বা কর্মী নিয়োগ কিছুই হয়নি। মাহিনগরে জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১১.০৭ একর জমিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তুতি শুরু করে সরকার। পূর্ত দপ্তরের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে অর্ধসমাপ্ত হয়ে রয়েছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। তবে ওই পর্যন্তই। অর্থের অভাবে যেমন সীমানা প্রাচীর, গেট তৈরির কাজ করা যায়নি এখনও, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অনুমোদন হয়নি। এর মধ্যে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে ওই জমিতে আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় আর গড়া হবে কি না সেই প্রশ্ন ওঠে। আন্দোলনকারীদের স্বস্তি দিয়ে এবারে বিশ্ববিদ্যালয় মাহিনগরের প্রস্তাবিত জমিতে করার দাবি জানিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে চিঠি দিলেন নতুন উপাচার্য প্রণব ঘোষ।