পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: অন্নপ্রাশন হোক বা বিয়েবাড়ি। জগের পরিবর্তে এখন বোতলবন্দি জলের চল এসেছে। কিন্তু প্রতিটি বোতলের জলই প্রায় নষ্ট হতে দেখা যায় অনুষ্ঠান বাড়িতে। খাওয়াদাওয়ার পর্ব মিটতেই সেই উচ্ছিষ্ট জল নিতে পৌঁছে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে সেই বেঁচে যাওয়া জল সংগ্রহ করে ওয়াটার ব্যাংক তৈরি করেছেন তাঁরা। রবিবার প্রায় ১০০ লিটার সংগৃহীত জল তাঁরা প্রখর রোদে শহরের বিভিন্ন গাছে দিলেন। আগামীতেও এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবীরা।
সময় পালটেছে। মানুষের জীবনশৈলীও বদলে যাচ্ছে। আগের দিনের মতো জগে জলের চাইতে বোতলের জলেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন আমন্ত্রিত থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান বাড়ির লোকজন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে প্রতিটি টেবিলের বোতলেই প্রচুর মাত্রায় জল থাকতে দেখা যায়। ওই আধখাওয়া জলের বোতলের জায়গা হয় ডাস্টবিন। ফলে পানীয় জলের অপচয় সকলের চোখের সামনেই হয়। তাই এবার এই অপচয় রোধে মাঠে নামল বালুরঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা বালুরঘাটে ওয়াটার ব্যাংক তৈরি করে সেই জলের পুনর্ব্যবহার করছে।
তাদের সদস্যরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে ওই বেঁচে যাওয়া জলের বোতলগুলি সংগ্রহ করছেন। পরে সেই বোতল থেকে জল বের করে বড় জারে ভরে নিচ্ছেন তাঁরা। অন্যদিকে, বালুরঘাট পুরসভার তরফে শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তার ডিভাইডার বরাবর একাধিক গাছ লাগানো হয়েছে। সেই জল শহরের গাছগুলিতে দিয়ে সেগুলির প্রাণ রক্ষা করছেন বলে সদস্যরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে জল বেঁচে গেলে তা না ফেলার অনুরোধ করছেন।
বালুরঘাটের (Balurghat) পরিবেশপ্রেমী তুহিনশুভ্র মণ্ডল বলেন, ‘বিন্দু বিন্দু জল আমাদের সম্বল। এটাই মূল মন্ত্র। অনুষ্ঠান বাড়িতে বেঁচে যাওয়া এই জল হামেশাই নষ্ট হয়। আমরা তা সংগ্রহ করেছি।’ আগামীতেও এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর সংযোজন, ‘ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে জলবন্ধু তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা এই কাজে শামিল হয়েছেন। মূলত ভূগর্ভস্থ জল না তুলে জলের পুনর্ব্যবহার করতেই এই উদ্যোগ। এতে জলের অপচয় রোধ হচ্ছে।’
এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে জানিয়েছেন বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র। তাঁর কথায়, ‘পুরসভার স্প্রেয়ার মেশিনের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই গাছগুলিতে জল দেওয়া হয়।’ সচেতন মানুষ এভাবে এগিয়ে এলে কাজ আরও সহজ হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেন তিনি।