ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয় (Alipurduar College) ঘোষণা হয়েছে প্রায় সাত বছর আগে। কিন্তু এতদিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট অনুমোদন পেল না। এমনকি ইসি বা এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে আচার্য তাঁর মনোনীত দুজন সদস্যের নামও পাঠাননি। দুটি ক্ষেত্রেই ফাইল নাকি আটকে আছে রাজ্যপালের কাছে। আর এখন আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনকানুন না থাকায় এবং ইসি’র সদস্য না থাকায় স্নাতকোত্তর বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য বোর্ড অফ স্টাডিজও কোনও কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারছে না। এমনকি ন্যাকের ভিজিটও হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন স্পনসর্ড প্রোজেক্ট থেকে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, সব থমকে পড়েছে। যা নিয়ে জেলার শিক্ষা মহলে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
যদিও আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সরিৎকুমার চৌধুরী বলেন, ‘স্ট্যাটিউটের অনুমোদন না হওয়া এবং ইসি সদস্য না থাকায় আমাদের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমরা দুটো বিষয়ের জন্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমাদের আশা খুব দ্রুত স্ট্যাটিউট অনুমোদন এবং ইসি’র দুজন সদস্য পেয়ে যাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ‘দুটি বিষয় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি আমি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর গোচরে নিয়ে আসব।’
২০১৮ সালে আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন মেলে। তার দু’বছর পর উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, অনুমোদনের সাত বছর পরেও এখনও তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, স্ট্যাটিউটই অনুমোদিত হয়নি। এই অবস্থায় আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যার পাহাড় জমতে শুরু করেছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরের স্পনসর্ড প্রোজেক্ট পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি পরিকাঠামোগত উন্নয়নও থমকে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মাথায় ন্যাকের পরিদর্শনের পর সার্টিফিকেট মেলার কথা। কিন্তু স্ট্যাটিউটের অনুমোদন না মেলায় এবং ইসি সদস্য না থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে। তবে আশার কথা সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যাপকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এই স্ট্যাটিউট বা ইসি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? স্ট্যাটিউট হল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব আইনকানুন। এটা তৈরি না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়মকানুন তৈরি হবে না। এটা গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এগজিকিউটিভ কাউন্সেলিং বডি তৈরি হয়। স্নাতকোত্তর বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য বোর্ড অফ স্টাডিজ তৈরি হয়। বোর্ড অফ স্টাডিজকে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্যাকাল্টি কাউন্সেলিং (অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল)। এক অধ্যাপকের কথায়, ‘আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৫ বছর হতে চলেছে। কিন্তু স্ট্যাটিউট আর ইসি না হলে কোনও কিছুই এগোবে না। এমনকি মিলবে না উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন ফান্ডও।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, প্রায় ৩ মাস আগে রাজ্যের পক্ষ থেকে স্ট্যাটিউট অনুমোদনের জন্য রাজভবনে পাঠানো হয়। এমনকি রাজভবনের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি স্ট্যাটাস রিপোর্টও পাঠায় আচার্যের কাছে। কিন্তু তার পরেও রাজভবন থেকে এখনও স্ট্যাটিউটের অনুমোদন আসেনি। এমনকি রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তাঁর মনোনীত দুজন সদস্যের নামও পাঠাননি। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে।