রাজু সাহা, শামুকতলা : ডুয়ার্সের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বুনো হাতির আতঙ্কে তটস্থ থাকেন সর্বক্ষণ। কিন্তু রবিবার ভোরের একটি ঘটনায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন শামুকতলার কার্তিকা চা বাগানের বাসিন্দারা।
একপাল হাতি শনিবার শেষরাতে চলে এসেছিল কার্তিকা চা বাগানে। হঠাৎ বাগানের নালায় পড়ে যায় সেই পালে থাকা একটি তিন মাসের শাবক। অন্য হাতিরা ধীর্ঘক্ষণ ধরে সেটিকে টেনে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এবং সেখানেই মৃত্যু হয় শাবকটির। এরপর নালার মধ্যেই তাকে মাটিচাপা দিয়ে দেয় অন্য হাতিরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ না থাকলেও পরবর্তীতে মাটি চাপা দেওয়া শাবককে দেখে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেই অনুমান বনকর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, হাতিদের এমন আচরণ অতীতে অনেকেই দেখেছেন।
ভোরের দিকে হাতিদের চিৎকার শুনতে পেরেছিলেন শ্রমিক মহল্লার বাসিন্দারা। সেখানে হাতি আসা প্রায় রোজকার ব্যাপার। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি যে হস্তীশাবকের মৃত্যু হয়েছে। আরেকটু সকাল হলে শ্রমিকরা ওই এলাকায় গিয়ে দেখতে পান, মাটি চাপা দেওয়া হস্তীশাবকের একটি পা বের হয়ে আছে। তারপরেই তাঁরা বন দপ্তরে খবর দেন। এরপর দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যান বনকর্মীরা।
বনকর্তারা জানাচ্ছেন, বক্সার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ওই চা বাগানে এসেছিল একপাল হাতি। এত ছোট শাবকটি কোনওভাবে বাগানের নালায় পড়ে যায় এবং গুরুতর আঘাত পায়। এরপর অন্য হাতিরা সেটিকে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু আঘাতপ্রাপ্ত শাবকটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর সেটিকে মাটি চাপা দিয়ে জঙ্গলে ফিরে যায় দলের অন্যরা। বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের পূর্ব বিভাগের ক্ষেত্র উপ অধিকর্তা দেবাশিস শর্মা বলেন, ‘নালায় পড়ে গিয়ে ওই মর্দা হস্তীশাবকটির মৃত্যু হয়েছে। সেটির বয়স আনুমানিক তিন মাস। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, শাবকটির এমন মৃত্যুতে বাগানবাসী ব্যথিত। এলাকার বাসিন্দা বাবুচন্দ বলেন, ‘আমরা হাতির ডাক শুনেছিলাম। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেছে, কেউ বুঝতে পারিনি। আর শাবকের মৃত্যুর পর মাটি চাপা দেওয়ার বিষয়টি আমদের অবাক করছে।’
পরিবেশপ্রেমী জীবনকৃষ্ণ রায়ের মন্তব্য, ‘ভারত সহ আফ্রিকার নানা জায়গায় এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। মৃত হাতিকে কবর দিয়ে সমাধিস্থ করার রীতি ওদের মধ্যে রয়েছে।’