Alipurduar | মহিলারা পরিচারিকা, মাসিরা এখন এজেন্ট

Alipurduar | মহিলারা পরিচারিকা, মাসিরা এখন এজেন্ট

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


একসময় তরাই-ডুয়ার্সের চা শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিত ‘মাসি’রা। ওরা মূলত স্বপ্ন দেখাত কমবয়সি মেয়েদের। একটু ভালো খেতে পরতে পাওয়ার আশায় বাইরে গিয়ে লালসার শিকার হত দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা। চা বলয়ে বাইরে যাওয়ার সেই ট্রেন্ড এখনও চলছে। তবে ধরন বদলেছে। কাজ পাইয়ে দেওয়ার মাসিদের আজ খুঁজে পাওয়া ভার। এখন দেখা যায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার এজেন্টদের। তাঁরাই বিভিন্ন বাগান থেকে মেয়ে ‘তোলেন’।

সম্প্রতি নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে যে ৫৬ জন মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) মাদারিহাটের (Madarihat) গ্যারগান্ডা চা বাগানের জনা ছয়েক রয়েছেন। মাদারিহাট-বীরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির গ্যারগান্ডার সদস্যা সরিতা লামা বলছিলেন, ‘বাগানটা ধুঁকছে। শ্রমিক, কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের মজুরি এবং বেতন বকেয়া। তাই পেটের দায়ে বাগান ছাড়ছে মেয়েরা।’

বড় বড় শহরে বাবুদের বাড়িতে কাজ করে মাসে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা জোটে। কারও বরাতে জোটে আরও বেশি। গ্যারগান্ডার সুসুলা সারকি রয়েছেন দিল্লিতে। অরবিনা লামা, সীমা শর্মারা পাড়ি দিয়েছেন কুয়েতে। অথচ ওরা সবাই ওই চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক। বাড়ি ফেরার পর তাঁদের জীবনযাত্রার মান পালটে যাচ্ছে।

২০১৫ সাল থেকে বন্ধ ভুটান সীমান্তের লঙ্কাপাড়া চা বাগান। ওই বাগানের এক শ্রমিকের ছেলে এবং তাঁর স্ত্রী কাশ্মীরে মোটা মাইনের চাকরির লোভ দেখানো এক এজেন্সির ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। ওই তরুণ তো শ্যালিকাকেও কাশ্মীর নিয়ে যান। সেখানে দুটি বাড়িতে ওই তিনজনকে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। পরে তাঁরা জানতে পারেন, ওই এজেন্সি গৃহকর্তাদের থেকে তাঁদের মাথাপিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। অর্থাৎ একপ্রকার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। তেলেঙ্গানায় কাজ করতে গিয়ে গত বছরের ২৮ অগাস্ট আততায়ীর ধারালো অস্ত্রে মৃত্যু হয় লঙ্কাপাড়া চা বাগানের ২০ নম্বর লাইনের গৃহবধূ দীপনা তামাংয়ের। লঙ্কাপাড়ারই এক তরুণীকে দুবাইয়ের একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। এসব সত্ত্বেও বাইরে যাওয়ার টান কমছে না। কেন?

শ্রমিকরা কাঁচা পাতা বিক্রি করে যা রোজগার করেন। তাতে সংসার চলে না। তাই শ্রমিক পরিবারের মেয়েরা বাইরে মূলত পরিচারিকার কাজ করতে যাচ্ছেন। চা শ্রমিক প্রিস্কা ওরাওঁ বলছিলেন, ‘টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের খাতা-কলমও কিনে দিতে পারছি না। কাজ করেও প্রাপ্য টাকা সময়মতো মেলে না। এর চেয়ে ভিনরাজ্যে গিয়ে পরের বাড়িতে কাজ করাই ভালো।’

আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের লঙ্কাপাড়ার সদস্য বিশাল গুরুংও বললেন, ‘এতে ওই পরিবারগুলির জীবনযাপনের মানোন্নয়ন ঘটেছে। ভালো বাড়িঘর তৈরি করেছেন অনেকেই।’

আর মহিলার সংখ্যা কমছে চা বলয়ে। বিষয়টি মানছেন তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি উত্তম সাহা। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘চা শ্রমিকদের একটা বড় অংশই মহিলা। শ্রমিক পরিবারগুলিতে উপার্জনে বরাবর মহিলাদের ওপর নির্ভরতা বেশি। তাই মহিলারাই বাগান ছেড়ে ভিনরাজ্যে টাকা রোজগারে যাচ্ছেন।’

লঙ্কাপাড়া, রামঝোরা, তুলসীপাড়া, রায়মাটাং, কালচিনি সর্বত্র একই ছবি। আর বাড়িতে ছোটরা নিজেরাই নিজেদের অভিভাবক। তাদের মা-ই তো নেই! বান্দাপানি চা বাগানের টপ ওয়ান লাইনের বিধবা চা শ্রমিক সুনীতা মাহালি বর্তমানে তামিলনাডুর একটি শহরে রয়েছেন। তিনি স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের রেখে গিয়েছেন বিধবা শাশুড়ি আর অসুস্থ দেওরের জিম্মায়। ওই বাগানের কর্মহারা স্টাফ সুরজ গোপের কথায়, ‘বান্দাপানির প্রচুর মহিলা ভিনরাজ্যে রয়েছেন। খেয়েপরে বাঁচতে হবে, পরিবারকেও তো বাঁচাতে হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *