Alipurduar | পুজোর জন্য স্বার্থত্যাগ ‘লালপাড়া’র

Alipurduar | পুজোর জন্য স্বার্থত্যাগ ‘লালপাড়া’র

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: তাঁদের দোরের মাটি ছাড়া প্রতিমা তৈরি করা‌ সম্ভব নয়। অথচ একটা সময় যখন গোটা আলিপুরদুয়ার শহর মেতে উঠত দুর্গাপুজোর আনন্দে, তখন তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিতই থেকে যেতেন ‘লালপাড়া’ সমাজপাড়ার বাসিন্দারা। তবে গত বছর চারেক ধরে পরিস্থিতি বদলেছে। এখন আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar) যৌনপল্লিতে দুর্গাপুজো (Durga Puja) হয়। এবছর তাঁদের বাজেট কিছুটা বেড়েছে। আর বেড়েছে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা।

আন্তরিকতা বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে কেন? কারণ, এবছর দুর্গাপুজোর আয়োজন করা নিয়ে দুটো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই যৌনপল্লির বাসিন্দারা। প্রথমত, পুজোর তিনদিন নিরামিষ রান্না হবে সমাজপাড়ার যৌনকর্মীদের বাড়িতে। বিশেষ করে পুজোর কাজকর্ম সামলানোর দায়িত্বে থাকবেন যেসব যৌনকর্মী তাঁরা উপোস করে পুজোর আয়োজন করবেন। আর দ্বিতীয়ত, যাঁদের ওপর পুজোর কাজের দায়িত্ব, তাঁরা সেসময়টায় উপার্জন বন্ধ রাখবেন। সমাজপাড়ার এক যৌনকর্মীর কথায়, ‘আমরা তো উপোস করে পুজোর সব জোগাড়যন্ত্র করব। এছাড়া পুজোর তিনদিন বাড়িতে নিরামিষ রান্নাই হবে। অষ্টমী ও নবমীতে প্রায় সারাদিন ধরেই পুজো চলবে। ফলে সেই ক’দিন ব্যবসা করতে পারব না।’

মনে রাখতে হবে, পুজোর দিনগুলিতে সমাজপাড়ায় বরাবরই ভালো ব্যবসা হয়। সন্ধ্যা নামতেই গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। উৎসবের দিনগুলোতে তো দিনের বেলাতেও গ্রাহকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তাই এই সময়টায় ব্যবসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কিন্তু বড় ব্যাপার। বড় স্বার্থত্যাগ। যদিও সমাজপাড়ার সকলে ব্যবসা বন্ধ রাখছেন না। যাঁরা পুজোর আয়োজনে সরাসরি জড়িত, কেবল তাঁরাই।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মণ্ডপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এবছরের পুজোর বাজেট প্রায় ২ লক্ষ টাকা। পুজোর উদ্বোধনে জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এক যৌনকর্মীর কথায়, ‘পাড়ায় পুজো হচ্ছে বলে ছোটদের খুব আনন্দ। পুজোর সময় তাদের মায়েরা তো সন্ধ্যার পর উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। তাই তাদের নিয়ে ঠাকুর দেখানো সম্ভব হত না। এখন পাড়াতেই পুজোর আনন্দ করতে পারে। আর ছোটদের সঙ্গে বড়দেরও উৎসবের দিনগুলি আনন্দে কেটে যায়।’

তবে কেবল সময়ের সমস্যাতেই যে বাইরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয় না, তা কিন্তু নয়। পাড়ার কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্য পাড়ায় ঠাকুর দেখতে গেলে বা অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে গেলে নাকি অনেকেই একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায়। নিজের পাড়ার পুজোয় সেসবের বালাই নেই। তাছাড়া এতদিন অন্যান্য পুজোর দশমীর শোভাযাত্রায় সমাজপাড়ার মহিলারা অংশ নিতে পারতেন না। নিজের পাড়ায় পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে সেই সুযোগ পাচ্ছেন।

এবছর পুজোর কাজকর্ম করার জন্য কয়েকজনের একটি দল তৈরি করা হয়েছে। তাঁরাই পুরোহিতের সঙ্গে দুর্গাপুজোর কাজে অংশ নেবেন। পুজোর কাজের জন্য বিশেষ শাড়ি পরবেন তাঁরা। নবপত্রিকার স্নানে অংশ নেবেন। অষ্টমীর সন্ধ্যায় খিচুড়ি বিলি করা হবে। পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।

আলিপুরদুয়ার যৌনকর্মী উন্নয়ন সমিতির মুখ্য উপদেষ্টা ল্যারি বসু বলেন, ‘২০২২ সাল থেকে সমাজপাড়ায় দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। সকলে এলাকাতেই অঞ্জলি দিতে পেরে খুশি। সমাজপাড়ার অন্য মেয়েদের সঙ্গে মুসলমান মেয়েদেরও পুজোর আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *