ফালাকাটা: মৌনী অমাবস্যায় কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন মণীন্দ্র সরকার। সেসময় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা দূর থেকে দেখেছিলেন। প্রার্থনা করেছিলেন আর যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে। কিন্তু সম্প্রতি ফের নয়াদিল্লির স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। এবার শেষ তিথি অর্থাৎ শিবরাত্রিতে মহাকুম্ভে ভিড় আরও বাড়বে। রবিবারও ফালাকাটার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেকেই শিবরাত্রি তিথিতে কুম্ভস্নানের জন্য রওনা দেন। আর যাতে পদপিষ্টর ঘটনা না ঘটে সেজন্য এদিন কালীপুরে কুম্ভফেরত আশিজন ধর্মসভার আয়োজন করেন। সেখানে হয় কীর্তন ও ভাগবত পাঠ। সেখানেই কুম্ভফেরতদের প্রার্থনা, আর যাতে কোনও দুর্ঘটনা প্রয়াগরাজে না হয়।
রবিবার সকাল থেকেই ফালাকাটার কালীপুর গ্রামে শীতলা মন্দির চত্বরে ভোগ রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। জানা গেল, এই উদ্যোগ নিয়েছেন কুম্ভফেরত পুণ্যার্থীদের আটটি দলের প্রতিনিধিরা। একেবারেই প্রথম তিথিতে এই এলাকা থেকে ত্রিবেণি সংগমে স্নান করতে গিয়েছিলেন পিডব্লিউডি (রোডস)-তে কর্মরত মিঠুন বর্মন। ট্রেনযাত্রা ও স্নানে তাঁর অবশ্য তেমন সমস্যা হয়নি। মিঠুন অবশ্য পরে ঘটে যাওয়া পদপিষ্টের ঘটনায় ব্যথিত। তাঁর কথায়, ‘প্রথম তিথিতে বড় সমস্যা হয়নি। কিন্তু তারপর অনেক পুণ্যার্থী বিপদে পড়েন। যাতায়াতেও কষ্ট হয়। শেষ তিথিতে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে সেজন্য এদিন আমরা প্রার্থনা করি।’ সব থেকে বেশি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় মৌনী অমাবস্যা তিথিতে স্নান করতে গিয়ে পুণ্যার্থীদের। সেই তিথিতেও ফালাকাটা, শালকুমারহাট, বাগানবাড়ি সহ নানা এলাকার তিনটি ছোট চার চাকার গাড়িতে কুম্ভস্নানে গিয়েছিলেন ২১ জন। তাঁদের কেউ ভিড়ের মধ্যে ত্রিবেণি সংগমে স্নান করতে পারেননি। গঙ্গাস্নান সেরে বাড়ি ফিরতে হয়। মণীন্দ্র নিজের গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। এদিনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মণীন্দ্রর কথায়, ‘মৌনী অমাবস্যার রাতে কুম্ভমেলায় ছিলাম৷ ভিড়ের চাপে ত্রিবেণি সংগমের ধারেকাছে কেউ যেতে পারিনি। পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা দূর থেকে দেখেছি। তারপর অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরি। আর এরকম না ঘটুক আমরা সেটাই চাই।’
যখন নিউ দিল্লির স্টেশনে পদপিষ্টর ঘটনা ঘটে তখন সেখানেও ছিলেন ফালাকাটার চারজন পুণ্যার্থী। বাপন সরকার নামে পারপাতলাখাওয়ার তরুণ বলেন, ‘আমরা চারজন কুম্ভ স্নান সেরে ট্রেনে দিল্লি যাই। সেখানে এক আত্মীয়র বাড়িতে উঠি। বৃন্দাবনে যাওয়ার কথা ছিল। তার একদিন পরেই স্টেশনে পদপিষ্টর ঘটনা ঘটে৷ পরে আর বৃন্দাবনে যাওয়া হয়নি। অনেক কষ্টে ট্রেনে বাড়ি ফিরতে হয়।’
কালীপুর থেকে বাপ্পা সরকার, দীপক তরফদার, সন্তোষ বর্মনদের মতো অনেকেই মহাশিবরাত্রিতে কুম্ভস্নান করবেন বলে গাড়িতে রওনা দেন। এবারের যাত্রীদের যাতে বড় বিপদের মুখে পড়তে না হয় সেজন্যই কুম্ভফেরত পুণ্যার্থীরা প্রার্থনা করেন। এলাকার শীতলা মন্দির চত্বরে সন্ধ্যায় শুরু হয় কীর্তন। ভাগবত পাঠ করেন জ্ঞানেন্দ্র সরকার। তারপর ধর্মসভায় কুম্ভস্নানের পুণ্য নিয়ে আলোচনা করেন বানারহাটের পণ্ডিত সঞ্জীব উপাধ্যায়। সব শেষে এলাকার মানুষদের খাওয়ানো হয় ভোগের প্রসাদ।