সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কখনও মেঘ, কখনও রোদ। বৃষ্টি কখনও ঝিরঝিরে, কখনও ঝমঝমিয়ে। ফি দিন আবহাওয়া অফিসের এমন পূর্বাভাস সকলের চেনাজানা। পূর্বাভাস পেলেও প্রায় সময় আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বিরুদ্ধে আমজনতার অভিযোগ শোনা যায়, সকালে আবহাওয়া যেমনটা থাকবে বলে শোনা যায়, তেমনটা মোটেই কাটে না। এবার সেই অভিযোগ প্রায় শূন্য হয়ে যাবে বলে নতুন দাবি তুললেন সিডনির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। বললেন, ১৫ বছরের চেষ্টায় অঙ্কের জটিল ধাঁধার সমাধান করা হয়েছে। এবার থেকে আরও ভালোভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যাবে।
বাতাসের ধূলিকণা, কারখানার ধোঁয়ায় মিশে থাকা কার্বন অণু, মরুভূমির বালি – এসব কিছুর রাসায়নিক গঠন ও বিক্রিয়ার মধ্যেই নাকি লুকিয়ে রয়েছে আবহাওয়ার নানা সংকেত। বিশেষত গোলক আকারের ছোট ছোট কণার উপর নির্ভর করে আগামী দিনে কেমন থাকতে পারে কোনও নির্দিষ্ট এলাকার আবহাওয়া। কিন্তু বিজ্ঞানীদের কৌতূহল ছিল গোলকাকার নয়, এমন আনুবীক্ষণিক কণার গতিবিধির উপর। তার ভিত্তিতে হিসেবনিকেশ করে পাওয়া সমীকরণের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব যে পূর্বাভাস কতটা মিলতে পারে। এতদিন সেখানেই আটকে ছিলেন সিডনির ম্যাকোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের গবেষকরা। তবে এবার অধ্যাপক স্টুয়ার্ট হকিন্সের গবেষণার ভিত্তিতে সেই ধাঁধার সমাধান করতে পেরেছেন বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
অধ্যাপক স্টুয়ার্ট হকিন্সের ব্যাখ্যা, ”বাতাসে যেসব ভাসমান কণা রয়েছে, তাদের গতিবিধির উপর উষ্ণতার তারতম্য নির্ভর করে। নিজেদের শক্তি বিকিরণ করে তারা পৃথিবীকে শীতল করতে পারে। আবার যদি কোনও আবর্তে ওইসব কণা আটকে পড়ে, তাহলে তাদের নিজেদের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তখন পাল্লা দিয়ে বাড়ে সেখানকার তাপমাত্রাও। কিন্তু ওই সব কণার আসল গঠন কেমন, তা জানতে না পারলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একটা বড় ফাঁক থেকে যায়।” গত ১৫ বছর ধরে হকিন্স একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করে এসব কণার গঠন বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেই অনুযায়ী অঙ্কের নির্দিষ্ট ছকে ফেলে বুঝতে চেয়েছেন, ওই সব কণা থেকে আলোক তরঙ্গের গতি ঠিক কেমন। সেই গতিপথ বায়ুমণ্ডলের কোথায় কতটা তাপমাত্রা থাকবে, কোথায় ঝঞ্ঝার পরিস্থিতি তৈরি হবে, কোন স্তরের হাওয়া উষ্ণ হয়ে উঠবে – এসবই দিকনির্দেশ করে।
এবার সেই মডেল অনুযায়ী, অঙ্ক আরও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। আরও বলা হচ্ছে, নতুন মডেলে তাপপ্রবাহ, বর্ষার আগমন, দূষণমাত্রা সংক্রান্ত সব পূর্বাভাস আরও ভালোভাবে পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জেরবার গোটা দুনিয়া, তাতে গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, জটিল ধাঁধার সমাধান অনেকটা ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে পাওয়া যাবে।