সতর্কবাণীতেই শেষ!

সতর্কবাণীতেই শেষ!

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


ফের হুমকি মমতার। নিজের দলকেই। হুমকিটা অবশ্য নতুন নয়। মাঝেমধ্যে শোনা যায়। দুর্নীতি, তোলাবাজি, কাটমানির বিরুদ্ধে হুমকি। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশকে তুলোধোনা করে থাকেন তৃণমূল নেত্রী। সিনার্জি কমিটির বৈঠকে আবার করলেন। যদিও অভিজ্ঞতা বলে, হুমকিটা মুখে থেকে যায়। বাস্তবায়ন কম হয়। বিনিয়োগের প্রস্তাব কার্যকর করতে রাজ্য স্তরে সিনার্জি গড়ে দিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব যে কমিটির প্রধান।

সদ্য অনুষ্ঠিত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে অনেক লগ্নি প্রস্তাব জমা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি সেরকমই। সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নে কোনও বাধা আসুক, চান না তিনি। সিনার্জি কমিটিতে সেটাই আলোচ্য ছিল মমতার। তাঁর আলোচনায় স্পষ্ট, পরিবেশ, পরিকাঠামো ইত্যাদির পাশাপাশি শিল্পোদ্যোগের আরেকটি বড় অন্তরায় আছে। সেই অন্তরায় তাঁর নিজের হাতে গড়া দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। এমনকি, তাঁর সরকার, তাঁর প্রশাসনের একাংশের লোভ আরেকটি বাধা শিল্প বিকাশে। তিনি দল ও প্রশাসনের সেই অংশকেই সতর্ক করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীই বুঝিয়ে দিয়েছেন, এরা কীভাবে বাধা সৃষ্টি করে। শিল্পোদ্যোগীরা লগ্নি করতে এগিয়ে এলে প্রথমে অনুমতি দিতে টালবাহানা চলে। অনেকটা ফ্যালো কড়ি, করো শিল্প গোছের ঢংয়ে টেবিলের নীচ দিয়ে টাকা দাবি করে প্রশাসনের একাংশ। রাস্তা, বিদ্যুৎ, জল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সবক্ষেত্রের জন্যই আলাদা আলাদা নজরানা না দিয়ে কাজ হয় না। বিশেষ করে জমির চরিত্র বদল ও নামজারিতে যে টাকা না দিলে ফাইল নড়ে না, সিনার্জি বৈঠকে মমতা তা-ই জানিয়ে দিলেন।

এরপর থাকে তৃণমূলের একাংশের স্বার্থ। কারখানা থেকে সমস্ত কিছু নির্মাণে তৃণমূলের সিন্ডিকেটরাজ চলে। সেই সিন্ডিকেটকে এড়িয়ে বা খুশি না করে শিল্প গড়ে কার সাধ্য! খুশি করতে না পারলে কাঁচামাল আনতে বাধা, উৎপাদিত সামগ্রী বাইরে পাঠাতে বাধা ইত্যাদি চলে। হুমকি, শারীরিক নিগ্রহ ইত্যাদি অনেক কিছুই কার্যত জলভাত সেই স্বার্থসিদ্ধিতে।

সরকারের প্রধান হিসেবে, দলের শীর্ষ নেত্রী হিসেবে তিনি সব জানেন, সব খবর তাঁর কাছে থাকে। তাই তিনি সিনার্জির বৈঠকেই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে বলতে পারেন, আসানসোল ও দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসি’র (তাঁর দলের শ্রমিক সংগঠন) কমিটি ভেঙে দেবেন। আরও কোথাও কোথাও শ্রমিক সংগঠনের রদবদল ঘটাবেন তিনি। প্রশ্ন হল, তাতে লাভ হবে কি? বিনা বাধায় শিল্প গড়ে উঠবে তো? সংশয়ের নির্দিষ্ট অনেক কারণ আছে।

প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলকে এমন কড়া কথা এই প্রথম শোনালেন না। শিলিগুড়িতে সিন্ডিকেটরাজ ঠেকাতে পুলিশকে কতবার যে নির্দেশ দিলেন এ পর্যন্ত। উত্তরবঙ্গে এলেই তাঁর বালি পাচার, সরকারি জমি দখল, জমির বেআইনি কারবারের কথা মনে পড়ে। হুমকি দেন দলকে। সতর্ক করেন প্রশাসনকে, পুলিশকে। চুনোপুঁটিদের ধরপাকড় চলে কিছুদিন। তারপর সব স্বাভাবিক। গজলডোবায় হইহই করে কিছুদিন অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে অভিযান চলল। এখন সব অনিয়ম বহালতবিয়তে।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল খানিকটা খারাপ হওয়ায় কাটমানি বিরোধী অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই ডাকে অনেককে কাটমানি ফেরাতে হয়েছে। কাউকে কাউকে মানুষ ঘাড় ধরে কাটমানি ফেরাতে বাধ্য করেছে। কাটমানি প্রথা কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি। আবাস যোজনায় বারবার কাটমানির অভিযোগ উঠেছে। পানীয় জলপ্রকল্প অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কিছু ঠিকাদার ও নেতার পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতিতে।

দলের সর্বস্তরে অসৎদের সংখ্যা অনেক। কোথাও কোথাও অসৎদের পাল্লা ভারী। এই অসৎদের হাতেই অনেক জায়গায় দলের নিয়ন্ত্রণ। দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে অপারেশন ক্লিন অভিযান চালালে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যেতে পারে। চাই কি, সেই অভিযানের ঠেলায় বন্ধু বেজার হতে পারে। দলে দলে নেতা-কর্মীরা ভিনপথে পা বাড়াতে পারেন। তাতে ঘা পড়বে ভোটব্যাংকে। সেই ঝুঁকি মমতা নেবেন তো!

The submit সতর্কবাণীতেই শেষ! appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *