সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ যে নামেই ডাকি না কেন, সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য তা এক নীরব ঘাতক। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৪৭.৭% মানুষই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যদি একে নিয়ন্ত্রণে না রাখা হয়, তাহলে হৃদরোগ থেকে শুরু করে স্ট্রোক কিংবা কিডনির সমস্যার মতো নানা জটিল শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। ডাক্তারি পরামর্শের পাশাপাশি ডায়েট ও যোগাভ্যাসের মাধ্যমে হাইপারটেনশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এ বিষয়ে কী পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কী খাবেন ও কী খাবেন না
কম সোডিয়াম গ্রহণ: অতিরিক্ত নুন রক্তচাপ বাড়ায়। ফাস্ট ফুড ও প্যাকেটজাত খাবারে নুনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন। খাবার পাতে ভুলেও কাঁচা নুন ব্যবহার করবেন না।
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: পটাশিয়াম শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে। কলা, কমলালেবু, পালং শাক, মিষ্টি আলু এবং টমেটোতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সবুজ শাকসবজি ও ফল: সবুজ শাকসবজি ও ফলে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খান।
খাদ্যা তালিকা তৈরি করুন: ব্রাউন রাইস, ওটস এবং আস্ত গমের রুটি খাদ্যতালিকায় রাখুন। এই খাবারগুলোতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার ‘বিটা গ্লুকন’ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
স্বাস্থ্যকর চর্বি: অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো ও বাদামের মতো খাবারে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়া মাছের তেলে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা হৃদপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এই ফ্যাটগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
পরিমিত চা ও কফি পান করুন: অতিরিক্ত ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তাই, অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
যোগাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
যোগাভ্যাস শুধু শরীর নয়, মনকেও শান্ত রাখে। এর ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রাণায়াম: অনুলোম-বিলোম, ভস্ত্রিকা এবং কপালভাতির মতো প্রাণায়ামগুলি শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে মনকে শান্ত রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
আসন: শবাসন, বজ্রাসন, বালাসন, এবং ভুজঙ্গাসন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এই আসনগুলি শরীরের পেশী শিথিল করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
ধ্যান: প্রতিদিন আধা ঘন্টা ধ্যান করলে মানসিক চাপ কমে আসে। এই অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে ধ্যানাভ্যাস খুবই ফলপ্রসূ।
প্রতিদিনের রুটিনে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাচলা, সাইক্লিং বা সাঁতারের মতো ব্যায়াম করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের একটি বড় কারণ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের অভাব রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: এই অভ্যাসগুলি রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
মানসিক চাপ কমানো: যোগা, মেডিটেশন বা পছন্দের কোনও কাজ করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
সঠিক জীবনযাপন, সুষম ডায়েট ও নিয়মিত যোগাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি উচ্চ রক্তচাপকে সহজেই কাবু করতে পারবেন। তাই, সঠিক পরামর্শ মেনে শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন