সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ উপলক্ষ্যে কলকাতায় দলে দলে আসতে শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাংলা ভাষা, বাঙালিকে অসম্মান করার অভিযোগ তুলে গর্জে উঠেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতি সম্প্রতি কোচবিহারনিবাসী উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে এনআরসি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। অসম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল এনআরসির নোটিস পাঠায়। সেই ঘটনা জানাজানি হতেও রাজনৈতিক মহলে জোর চাপানউতোড় শুরু হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তীব্র প্রতিবাদ করেছেন সেই ঘটনায়। এবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে কলকাতায় এলেন উত্তমকুমার ব্রজবাসী।
এনআরসির নামে দেশের একাংশের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এই অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিরোধীরা। বাংলায় এনআরসি চালু করতে দেওয়া হবে না। সেই বার্তা আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। দিল্লিতেও সংসদের ভিতরে ও বাইরে এনআরসি ইস্যুতে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। এবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও এনআরসি ইস্যু, বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের ‘অপমান’ নিয়ে ঝড় উঠবে। সেই কথাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেই প্রতিবাদেই সামিল হতেই উত্তমকুমার ব্রজবাসী কলকাতায় এলেন বলে জানা গিয়েছে। কোচবিহার থেকে রওনা হয়ে আজ, রবিবারই অন্যান্যদের সঙ্গে কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন তিনি। তৃণমূলের তরফে এই কথা জানানো হয়েছে। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। সেই কথাই জোরালোভাবে বলা হয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসে ডাকযোগে একটি চিঠি পান কোচবিহার জেলার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী। প্রথমে তিনি বিষয়টা বুঝতে পারেননি। পরবর্তীতে জানতে পারেন, ওই চিঠি এনআরসির নোটিস, যা পাঠানো হয়েছে অসমের গুয়াহাটি থেকে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন উত্তমকুমার ব্রজবাসী। এনআরসি নোটিসে উল্লেখ, ভেরিফিকেশনের জন্য আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁকে অসমের কামরুপে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে হাজিরা দিতে হবে। দেখাতে হবে ভারতীয় হওয়ার প্রমাণপত্র। কিন্তু উত্তমবাবুর দাবি, তাঁরা অসম থেকে এসেছেন ঠিকই। বংশ পরম্পরায় বাংলার বাসিন্দা। কেন আচমকা নতুন করে তাঁকে সেসব প্রমাণ দাখিল করতে হবে, তা বুঝতেই পারছেন না।
সেই ঘটনার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ করেছিলেন। এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ও ইংরাজি দুই ভাষাতে লিখেছিলেন, ‘আমি হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি জেনে যে, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, এনআরসি নোটিশ জারি করেছে। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বাংলার বাসিন্দা। তাঁর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে বিদেশি/অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটিই প্রমাণ করে যে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনো ক্ষমতা বা অধিকার নেই।’ সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের ফর্ম দেখে মুখ্যমন্ত্রী সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, ফর্মে যে যে তথ্য চাওয়া হতে তাতে এনআরসি লাগু করার আশঙ্কা রয়েছে। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই উত্তমকুমার ব্রজবাসী পেয়েছেন এনআরসি ফর্ম। তা জেনেই বিজেপি শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে ফের গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী।