বই পড়া বনাম বই শোনার ছায়াযুদ্ধ

বই পড়া বনাম বই শোনার ছায়াযুদ্ধ

ব্লগ/BLOG
Spread the love


জয়দেব সাহা

বই পড়া একটা অভ্যাস, অথবা কেউ বলতে পারেন নেশা, আবার কেউ বলতেই পারেন ভালোবাসা। নতুন বইয়ের গন্ধ নিয়ে বাক্যালাপ অনেক হয়ে থাকে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে লেখার অন্ত নেই। ছোটবেলায় বাচ্চাদের হাতে বাবা-মায়েরা তুলে দেন নানা গল্পের বই। আর এইসব গল্পগুচ্ছ নিয়ে ওদের পথ চলার শুরু। একটা সময় পর তারা লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ শুরু করে, কখনও সেটা স্কুলের লাইব্রেরি, কখনও আবার নির্দিষ্ট কোনও অঞ্চলের। স্কুলের বইয়ের ফাঁকে গল্পের বই নিয়ে পড়তে বসার স্মৃতি প্রায় সবার জীবনেই জমে থাকে।

সময়ের সঙ্গে এই বইয়ের পরিভাষাতেও কিছু বদল আসতে শুরু করল। প্রথমেই এল ই-বুক। অনেকেই বলে থাকেন যে স্ক্রিনে বই পড়াটা ঠিক জমে ওঠে না। এতক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকাতে খুব কষ্ট হয়। সেই কথা মাথায় রেখে বাজারে চলে এল এমন ই-রিডার যন্ত্র যার স্ক্রিন বইয়ের পাতার মতো করার চেষ্টা করা হল। এই স্ক্রিনটা সাধারণ স্ক্রিন থেকে অনেকটাই আলাদা যেখানে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। আবার কারও বক্তব্য, নতুন বইয়ের গন্ধটাই যদি না থাকল, তাহলে আবার কীসের বই?

এই বিবর্তনের পরিভাষায় এবার আসতে শুরু করেছে শোনার বই অর্থাৎ অডিও বুক। এই ধারায় সানডে সাসপেন্সের মতো কিছু জিনিস প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু সেগুলোকে কখনও অডিও বুক বলা হয়নি, অথবা বলা যায়ও না। অডিও বুক মানে সমস্ত বইটারই একটা অডিও ভার্সন। অন্য যে কোনও কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে এই বই শোনা যায়। কখনও রান্না করতে করতে, কখনও আবার গাড়ি চালানোর সময়।

সময়ের সঙ্গে এই বিবর্তনের আলোচনা কি এখানেই থেমে যায়? হয়তো না। বই পড়ার জন্য প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন আর প্রয়োজন একাগ্রতা। বই শোনার জন্য কি তার প্রয়োজন হয় না? অবশ্যই হয়। এমনকি ই-বুকের ক্ষেত্রেও তার প্রয়োজন। যেটা বদলাচ্ছে, তা হল মাধ্যম। একটা প্রজন্ম যারা বইয়ের গন্ধ নিয়ে বই পড়া শুরু করেছে, যারা বইয়ের পাতায় হাত বুলিয়ে বইকে উপলব্ধি করেছে, তাদের কাছে এই বিবর্তনটা মেনে নেওয়া খানিকটা কঠিনই।

একটা প্রজন্ম আসবে যাদের শুরুটাই হবে ই-বুক দিয়ে, তারা অনায়াসেই মেনে নেবে এই পরিবর্তনের রূপরেখা। হয়তো সেই প্রজন্ম আসতে অনেকটা সময় বাকি, কিন্তু সময়ের নিয়মে আসবে তো অবশ্যই। আজকের প্রজন্মের মধ্যেই অনেকে এই নতুন ধারাকে স্বাগত জানিয়েছে। আস্তে আস্তে ই-বুক আর অডিও বুক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আর সময়ের সঙ্গে এই গ্রহণযোগ্যতার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। হয়তো একদিন কাগজে বাঁধানো বই হয়ে যাবে ইতিহাস। আর বইপাড়া? কেউ জানে না বইপাড়ার অস্তিত্ব ঠিক কী হতে পারে। সময় অনেক গল্প বলে, অনেক গল্প লিখে রাখে, কখনও সেটা সভ্যতার গল্প, কখনও অস্তিত্বের।

(লেখক মালদার সামসীর বাসিন্দা। পাটনা আইআইটি’র রিসার্চ স্কলার)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *