প্রশ্নে বিদেশনীতি

প্রশ্নে বিদেশনীতি

শিক্ষা
Spread the love


ভারতের বিদেশনীতি যেন দিশা হারাচ্ছে। পহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পর বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেওয়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে বৈকি ভারত। কিন্তু পাকিস্তানকে একঘরে করতে পারেনি। নানা দেশে কূটনৈতিক দৌত্যেও পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় হিসেবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। উলটে রাষ্ট্রসংঘের সন্ত্রাসবিরোধী দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির শীর্ষ পদে ঠাঁই পেয়েছে পাকিস্তান।

বিশ্বজুড়ে ভারতের দৌত্যের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির চেয়ারম্যান এবং সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ পাকিস্তানের পাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তাছাড়া ভারতের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার পাকিস্তানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও পাকিস্তানকে বিপুল অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করেছে ভারতের আপত্তিতে কর্ণপাত না করে।

ভারতের বিদেশনীতিতে ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে বলেই পাকিস্তান এতটা সুবিধা পাচ্ছে নিশ্চয়ই। সাউথ ব্লক নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বের কোনও দেশকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এককাট্টা করতে পারেনি। উলটে আরববিশ্বের পাশাপাশি একাধিক শক্তিশালী দেশকে কাছে পেয়ে ইসলামাবাদ নিজের সাফল্যের পরিধি বাড়িয়েছে। সন্ত্রাসবাদী হামলা ঠেকাতে যে কমিটির বিশ্বকে দিশা দেখানোর কথা, তার শীর্ষ পদে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ে পরিণত দেশটির থাকার অর্থ বিড়ালকে মাছ পাহারার দায়িত্ব দেওয়া।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে পাকিস্তানের এই গুরুত্ব ভারতের কাছে অস্বস্তিকর। পাকিস্তান বরাবরই ‘ভিকটিম কার্ড’ খেলে বিশ্বে করুণা আদায়ের চেষ্টা করে। সফলও হয়। পহলগামে হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের বিশ্বজোড়া দৌত্যে গোড়ায় মনে হয়েছিল, পাকিস্তান এবার অন্তত পরিত্রাণ পাবে না। শেষপর্যন্ত তা না হওয়ায় ভারতের বিদেশনীতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে বৈকি।

অথচ দুনিয়া দেখেছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করেছে। হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহারের মতো মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতারা শুধু আশ্রয় নয়, পাকিস্তানের সরকারি সুযোগসুবিধা কাজে লাগিয়ে লাগাতার ভারতবিরোধী সভা এবং কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তারপরও পাকিস্তান নিজেদের সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার রাষ্ট্র বলে দাবি করে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করছে। সেই মুখোশ খুলে দিতে ব্যর্থ ভারত।

বিপুল পরিমাণ ঋণের বড় অংশ ভারতবিরোধী কার্যকলাপে খরচ করছে জেনেও আইএমএফ, এডিবি’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা পাকিস্তানকে মুক্ত হস্তে সাহায্য করছে। ভারত তাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারছে না। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রভাবশালী এবং দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি ছিল ভারতের। জওহরলাল নেহরুর জমানা থেকেই মার্কিন ও সোভিয়েত ব্লকে বিভাজিত দ্বিমেরু বিশ্বে ভারতের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর জি২০, জি৭ নিয়ে মাতামাতি চললেও নির্জোট আন্দোলনের মঞ্চে ভারতকে বড় একটা দেখা যায়নি। অথচ নির্জোট আন্দোলনের অন্যতম হোতা হিসেবে ভারত বরাবর তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল, মুক্তিকামী দেশগুলিকে দিশা দেখিয়েছে। পাকিস্তান তখনও আমেরিকা, চিনের দোসর হিসেবে বিশেষ খাতির পেলেও ভারতকে অবজ্ঞা করে পাকিস্তানকে নিয়ে এত নাচানাচি হত না।

অথচ এবার ভারতীয় সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের ২৪ ঘণ্টা পর কুয়েত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য নিজের দেশের দরজা খুলে দিয়েছে। অর্থাৎ ভারতের সামরিক, কূটনৈতিক ইত্যাদি পদক্ষেপের পরেও বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তান রয়েছে স্বমহিমায়। এটা ভারতের বিদেশনীতির ব্যর্থতা তো বটেই। এমন নয় যে, ভারতের বিদেশনীতি আগে ত্রুটিবিচ্যুতিমুক্ত ছিল। তবে সমস্যা বুঝলে নিজেদের সংশোধনও করেছে। কিন্তু দেশের বিদেশনীতিকে এখনকার মতো শাসকদলের ভোটের জিয়নকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি। যা এখন হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যতই জিরো টলারেন্স নীতি থাক, সেই নীতিকে ভোট রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করলে তার প্রভাব কখনোই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পড়বে না।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *