- শফিকুল ইসলাম
আমাদের দেশে কয়েক বছর ধরেই একমুখ দাড়ি ছেলেদের ফ্যাশনের অন্যতম হাতিয়ার। বিশেষ করে যাঁরা নিজের লুক নিয়ে মাঝেমধ্যেই পরীক্ষানিরীক্ষা চালান, তাঁরা অনেকেই এই দাড়ি রাখার বিষয়ে বেশ শৌখিন। এছাড়াও রয়েছে দাড়ির আরও রকমফের। এক মুখ ঘন দাড়ি চেহারা যেমন বদলে দেয়, তেমন ব্যক্তিত্বেও আনে আলাদা ছাপ।
ক্রিকেট থেকে সিনেমা, বহু সেলেব্রিটিরই দাড়ি রাখার প্রবণতা। তবে দাড়ি শুধু রাখলেই হয় না। তার জন্য প্রয়োজন কিছু যত্ন নেওয়াও।
অনেকেই দাড়ির দিকে লক্ষ দিচ্ছেন। পুরুষদের খোঁচা খোঁচা দাড়ি অনেকের কাছে অনেক আবেদনময় বলে মনে হয়। অতীতে রবীন্দ্রনাথ, অরবিন্দের মতো ব্যক্তিত্বের দাড়ি ছিল শ্রদ্ধার ব্যাপার। তাঁদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলে যায়।
মজার ও দুঃখের ব্যাপার অন্য জায়গায়। দাড়ি রাখার পর প্রতিবেশী মিত্রবাবু বললেন, ‘কী ব্যাপার! আপনি দাড়ি রাখলেন। না, না আপনাকে একদম মানাচ্ছে না।’ ওষুধের দোকানের মালিক মন্টুদা বললেন, ‘কোনও অসুখটসুখ করেছে? দাড়ি রেখে দিলেন যে!’ প্রাক্তন সহকর্মী দত্তবাবু রেগে গেলেন, ‘দাড়ি রাখার কী মতলব? দাড়ি রাখলে তোমাকে ঠিক মানায় না। গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বটা নষ্ট করে ফেললে!’
দাড়ি নিয়ে নানা ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে দাড়ি রাখার কোনও সম্পর্ক আদালতের সামনে প্রমাণ করতে না পারায় আদালত বিমানবাহিনীর এক মুসলিম কর্মীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।
মুহাম্মদ জুবায়ের নামে বিমানবাহিনীর এক কর্পোরালকে দাড়ি রাখার কারণে বরখাস্ত করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। জুবায়েরের দায়ের করা মামলাতেই এই রায় দিয়েছেন বিচারপতি টিএস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ।
বিমানবাহিনীর এক নির্দেশিকায় বলা ছিল, ২০০২-এর ১ জানুয়ারির আগে যেসব মুসলমান বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন দাড়ি-গোঁফ নিয়েই, শুধু তাঁরাই দাড়ি রাখতে পারেন। কিন্তু তারপরে বাহিনীতে যোগ দেওয়া কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে দাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না।
তবে শিখ ধর্মের অনুশাসনে দাড়ি, গোঁফ আর লম্বা চুল রাখা বাধ্যতামূলক বলে তাঁদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বলবৎ করেনি বিমানবাহিনী।
উত্তরপ্রদেশে গালে দাড়ি রাখার অপরাধে এক এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বাঘপত জেলায় এসআইয়ের নাম ইন্তসার আলি। পুলিশের মুখপাত্রের বক্তব্য, পোশাক সংক্রান্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার জন্য ওই এসআই সাসপেন্ড।
যদিও সাসপেন্ড হওয়া ওই পুলিশকর্মী দাবি করেছেন যে, তিনি দাড়ি রাখার জন্য পুলিশ বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনের এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব আসেনি। এর মধ্যেই হঠাৎই তাঁর হাতে আসে এই সাসপেনশনের নোটিশ। নিয়মমতো, একমাত্র শিখ ছাড়া অন্য কোনও ধর্মের পুলিশকর্মী গালে দাড়ি রাখতে পারেন না। তবে এখন অনেকেই বিশেষ অনুমতি নিয়ে দাড়ি রাখেন। সেক্ষেত্রে আবেদন করতে হবে আগে।
দাড়ি এখন শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় নিয়ম, আর শুধু হিপস্টার আর ভবঘুরেদের ফ্যাশন নয়। যে কোনও ভদ্রলোকই এখন দাড়ির মাধ্যমে নিজের মুখাবয়ব, ব্যক্তিত্ব পালটে দিতে পারেন। একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন, দাড়ি ও গোঁফ রাখলে একজন পুরুষ অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রশ্ন হল, দাড়ির জনপ্রিয়তার বাজারে সেনা বা পুলিশ তাদের পুরোনো নিয়ম পালটাবে কি?
(লেখক রায়গঞ্জের বাসিন্দা। শিক্ষক)