সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: সবজির চড়া দাম নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের বাজার চষে বেড়ানোর ছবিটা এখনও তাজা। এখন শীতকালীন সবজির পাইকারি দাম একেবারে তলানিতে (Vegetable Value)। কৃষকদের প্রশ্ন, দাম বাড়লেই ওই ফোর্স যেভাবে বাজার চষে বেড়ান, তার ছিটেফোঁটাও কেন এখন দেখা যাবে না?
রবিবার সকালে ধূপগুড়ি সুপার মার্কেটে ফুলকপি বেচতে গিয়ে প্রফুল্ল মণ্ডল ক্ষোভ উগরে দিলেন। তাঁর কথায়, ‘এই মরশুমে চাষ করে মুনাফা তো দূরের কথা, চাষের খরচ ওঠাই দুষ্কর। কয়েকদিন আগেও সবজির দাম কমাতে যাঁরা পুলিশ ও লোকজন নিয়ে ঘুরতেন, তাঁরা কি এখন কিছুই করতে পারেন না?’
সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে কপি, সিম, বেগুন ও স্কোয়াশচাষিরা। পাইকারি বাজারে ফুল ও বাঁধাকপির দাম কেজি প্রতি ২-৪ টাকা। সিম, সাদা বেগুনের দর কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা। কালো বেগুনের দর ৭-৮ টাকা প্রতি কেজি। স্কোয়াশের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ফসলের রক্ষণাবেক্ষণই ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানালেন ধূপগুড়ির চাষিরা।
গাদং এলাকার বেগুনচাষি সুজিত মল্লিক বলেন, ‘শীতকালীন সবজির মধ্যে বেগুন গাছ পরিচর্যার খরচ সবথেকে বেশি। সেই বেগুন বাজারে নিয়ে এলে দশ টাকাও দাম মেলে না।’
বাজারের এমন অবস্থায় চিন্তিত ব্যবসায়ী, আড়তদাররাও। ধূপগুড়ি সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গোপাল পালের বক্তব্য, ‘একেবারেই দাম না মেলায় কৃষকরা ফসলের দেখভাল ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই ফলন মারাত্মক মার খাবে। এতে ফের এক লাফে দাম অনেকটাই বেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকছে।’
কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাম সংগঠন সারা ভারত কৃষকসভার জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সভাপতি প্রাণগোপাল ভাওয়াল। তাঁর অভিযোগ, ফসলের সঠিক বিপণন নিয়ে সরকারি নীতি না থাকায় চাষিদের এমন দুর্দশা। আমরা ফসলের ন্যূনতম সহায়কমূল্য বেঁধে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামছি।’
গাজর, বিট, মটরশুঁটি, মালিনী শসা, টমেটো দাম ভালো রয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় ঘরে মুনাফার টাকা নিয়ে যাওয়া দুষ্কর বলেই জানালেন ধূপগুড়ি সুপার মার্কেটে সবজি নিয়ে আসা চাষিরা।
ধূপগুড়ি সুপার মার্কেটে দৈনিক গড়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আসছে ৩০-৫০ মেট্রিক টন। বেগুন আসছে ৭০-৮০ মেট্রিক টন। ফলন মাত্রাতিরিক্ত এমনটা নয়। আড়তদাররা জানাচ্ছেন, বাইরে চাহিদা কিছুটা কম থাকায় ফড়েরা সব ধরনের সবজি নিয়ে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। তাই দাম তলানিতে। চাষিরা চাইছেন, প্রশাসন তাঁদের স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ করুক।