দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: আদালত স্থগিতাদেশ দেয়নি। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় উত্তর দিনাজপুর (Uttar Dinajpur) জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে স্কুলগুলিতে (College)। বর্তমানে জেলার ৯১৭টি স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক। গতবছর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এই জেলাতেও। সিনিয়ারিটির ভিত্তিতে সার্কেল ভিত্তিক প্যানেল তৈরি হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দুই সদস্য সহ বেশ কয়েকজন। তার জেরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। ফলে কবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, কেউ জানেন না। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন আলির বক্তব্য, ‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু বেশ কয়েকজন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করায় আইনজীবীদের পরামর্শমতো নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছি।’ জানা গিয়েছে, ২৩ জুন হাইকোর্টে শুনানি আছে।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় টিআইসি দিয়ে স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ করানো হলেও, তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষক মহলে। ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেও যাঁরা ওই দায়িত্ব নেননি, তাঁরা এবার আবেদন করতে পারবেন না, এই সিদ্ধান্ত নেয় সংসদ। অন্যত্র এমন নির্দেশিকা জারি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন কয়েকজন শিক্ষক। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা শ্রাবণী রায় বলছেন, ‘২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগপত্র পাওয়ার পর পারিবারিক কারণে ওই দায়িত্ব নিতে পারিনি। ওই কারণে এবার নাকি আবেদন করতে পারব না। ন্যায়বিচারের জন্য মামলা করেছি। অন্য জেলায় যেখানে এমন নির্দেশিকা নেই, তখন আমাদের এখানে কেন হবে?’ মামলাকারী অপর এক শিক্ষক নারায়ণ দাসের বক্তব্য, ‘একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতির সুযোগ পায় একবার। ফলে বঞ্চিত করা হচ্ছে বুঝতে পেরে, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
উল্লেখ্য, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্ব ও শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে প্যানেল তৈরি করা হয়। মামলাকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, তাঁরা আবেদন করলেও প্যানেলে নাম রাখা হয়নি। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নির্মল বসু বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্কুলগুলিকে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে, ওই স্কুলগুলিকে প্যানেলের বাইরে রাখলে এমন সমস্যা হত না। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের অবশ্যই যুক্তি রয়েছে। যাঁরা আগে প্রধান শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেননি, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন না, এমন নির্দেশিকা কেন শুধু এই জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে?’ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি দুলাল রাজবংশীর প্রশ্ন, ‘রাজ্যের সর্বত্র যে নিয়মে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, সেই নিয়ম এখানে হলে কী সমস্যা রয়েছে?’ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক অঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘নাজিমুদ্দিন আলি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। মামলা হলে উনি কীভাবে করবেন? আগের তালিকা মেনেই তো উনি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।’