তুফানগঞ্জ: রাজ আমলের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ফুটবল খেলার মাঠের সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের নাটাবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজার সংলগ্ন এলাকায় কোচবিহার নাটাবাড়ি হেরিটেজ রোডের পাশে এই ফুটবল খেলার মাঠটি অবস্থিত। রক্ষণাবেক্ষণ ও সীমানা প্রাচীর না থাকায় ইতিহাসবিজড়িত এই মাঠটির পরিধি ক্রমশ কমছে। দিন-দিন এই মাঠের করুণ দশা দেখে ক্রীড়াপ্রেমী ও সংস্কৃতিপরায়ণ মানুষ সোচ্চার হয়েছেন। একসময় কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর এই মাঠে খেলেছিলেন। কোচবিহারের রাজকন্যা গায়ত্রী দেবী এই মাঠে সভা করেছিলেন। রক্ষণাবেক্ষেণের অভাবে মাঠটি অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর জেরে ক্রীড়াপ্রেমীরা এই মাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মাঠের একদিকে বাজার এলাকার আবর্জনা স্তূপাকারে জমিয়ে রাখা হয়েছে। দুর্গন্ধে টেকা মুশকিল বলে স্থানীয় খেলোয়াড়রা জানিয়েছেন। স্থানীয়দের প্রশ্ন, কবে এই মাঠ তার পুরোনো চেহারায় ফিরে আসবে? নাটাবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বাবলি মণ্ডল অধিকারী বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বড় বড় অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে। খেলার মাঠ সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মাঠের অভাবে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। মোবাইলে আসক্ত হচ্ছে। এই মাঠে কোচবিহারের মহারাজার টিমে এখনকার মনমোহন অধিকারী খেলতেন। মাঠের যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকছে। দুর্গন্ধে মাঠে যাওয়া যায় না। স্থানীয় খেলোয়াড় বিশাল পালের কথায়, ‘নিয়মিত এই মাঠে অনুশীলন করি। মাঠটি শীঘ্রই খেলার উপযোগী করে তোলা হোক।’
অনেকে এই মাঠে চাকরির পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন খেলাধুলো, দৌড় অনুশীলন করে থাকেন। মাঠ পরিষ্কার না থাকায় তাঁদের খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। এছাড়া রাতে নানা অসামাজিক কাজকর্ম চলার অভিযোগ উঠেছে। অনেকে মদ খেয়ে কাচের বোতল ফেলে যায়। কাচের টুকরোয় অনেক খেলোয়াড়ের হাত-পা কেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এই অবস্থায় মাঠের সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে প্রাচীর দেওয়া হলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরে আসতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দা জিতেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর অনুমান। তাঁর কথায়, ‘এই মাঠে সারাবছর ধরে ফুটবল, ক্রিকেট সহ আঞ্চলিক ও ব্লক পর্যায়ের বিভিন্ন খেলা হয়। একসময় এখানে বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হত। রাজারাও এই মাঠে অনেকবার খেলেছেন। কাজেই মাঠটিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব প্রশাসন ও সকলের।’
আরেক বাসিন্দা প্রকাশ পাল জানান, ২০০ বছরের পুরোনো এই মাঠকে রক্ষা করতে হলে সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা দরকার। আমাদের মতো ক্রীড়াপ্রেমীদের একটাই দাবি, রাজ আমলের মাঠটি আবর্জনামুক্ত করা হোক। পাশাপাশি মাঠটিকে পরিষ্কার করে খেলার উপযুক্ত করে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হোক। প্রশাসনের উচিত মাঠের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।