সায়নদীপ ভট্টাচার্য, তুফানগঞ্জ : তুফানগঞ্জের(Tufanganj) বালাভূত ঘেঁষা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে গোরু পাচার করতে গিয়ে পরপর বিএসএফের হাতে ধরা পড়ছে স্থানীয় পাচারকারীরা। তাই পরিকল্পনায় এবার একটু বদল আনা হচ্ছে। তুফানগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গোরু পাচারের জন্য এবার পড়শি রাজ্য থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হচ্ছে অভিজ্ঞ পাচারকারীদের। শুক্রবার মধ্যরাতে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে এরকমই অসমের এক ডাঙ্গোয়াল।
বিএসএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে ভারত-বাংলাদেশ কাঁটাতারবিহীন মধ্য বালাভূত দিয়ে পাচারকারীরা গোরু পাচারের ছক কষেছিলেন। অভিযান চালিয়ে পাচারের পথে চারটি গোরু সহ আমাদ আলি নামে এক ডাঙ্গোয়ালকে বিএসএফ আটক করে। আমাদ অসমের ধুবড়ি জেলার বাসিন্দা। তাঁকে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উদ্ধার হয়েছে চারটি গোরু। যদিও এলাকাবাসীর মত, স্থানীয়দের একাংশের মদত ছাড়া অসম থেকে বাংলায় এসে এমন কর্মকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়।
বিএসএফের কড়া পাহারায় অসমের বাংলাদেশ সীমান্তে পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গুলি চালিয়ে গোরু পাচারের পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছিল সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। তার আগে মঙ্গলবার রাতেও ঠিক একইভাবে সীমান্তবর্তী ঝাউকুঠি দিয়ে গোরু পাচারের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। বিএসএফের ১৪ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্তব্যরত জওয়ানরা অভিযান চালিয়ে তিনটি গোরুসমেত সাগর আলি নামে এক তরুণকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটে। সীমান্তের কাঁটাতার টপকে গোরু বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে পারলেই মিলছে মোটা অঙ্কের টাকা। তাই সহজে যাতে মূল চক্রীদের নাগাল না মেলে, তাই এবার ভিনরাজ্যের পাচারকারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অনুমান তদন্তকারী অফিসারদের।
জানা গিয়েছে, এক হাল (দুটি গোরু) পাচার করলে কুড়ি হাজার টাকা পাওয়া যেত। এদিকে, সম্প্রতি সীমান্তে পাচারের সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছে কয়েকজন স্থানীয় ডাঙ্গোয়াল।
ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে সীমান্তে চোরাচালানে মূল চক্রীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ এবং বিএসএফ। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে পাচারকারীরা অসমের ডাঙ্গোয়ালদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, সহজে যাতে দলের মাথাদের খোঁজ না মেলে। তুফানগঞ্জের(Tufanganj) এসডিপিও কান্নেধারা মনোজ কুমার বলেন, ‘ধৃতের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’
পুলিশ সূত্রে খবর, পরপর বিএসএফের ধরপাকড়ের জেরে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করতে চাইছে না। অসমের অভিজ্ঞ ডাঙ্গোয়ালদের ভাড়া করে এনে এরাজ্যে পাচারের কাজে লাগানো হচ্ছে। তাছাড়া অসমের ডাঙ্গোয়াল এনে কাজ করিয়ে পাচারকারীদের দুটি লাভ হচ্ছে। প্রথমত, তারা অসমের বাসিন্দা বলে আইনি ফাঁকে সহজে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিএসএফের গুলিতে মারা গেলে রাজনৈতিক নেতারা ভিনরাজ্যের বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। ফলে মূল চক্রীরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। বালাভূতের এক বাসিন্দার কথায়, ‘সীমান্তের মানুষের মদতে অসমের পাচারকারীরা সক্রিয় হচ্ছে। অন্য রাজ্যের কেউ এসে সীমান্তে গোরু নিয়ে যেতে পারে না। তাতে যা মুনাফা হচ্ছে সেটাও দুই পক্ষ ভাগ করে নিচ্ছে।’
ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তুফানগঞ্জ থানার পুলিশ জানতে পেরেছে, অসমে সীমান্তে বিএসএফের কড়াকড়ি বাড়ার পর বালাভূত দিয়ে সহজে গোরু পাচার করা যায়। শুধুমাত্র গোরুগুলি ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ।