গৌরহরি দাস, কোচবিহার: নাম না করে ফের রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) কঠোর সমালোচনা করলেন কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ (Jibon Singha)। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের একটি ভিডিও বার্তা ভাইরাল হয় (যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ)। ওই ভিডিও বার্তায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এই কলকাতিয়া সরকার আমাদের জাতি মাটির সরকার হতে পারে না। এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অসংবিধানিকভাবে আমাদের সি ক্যাটিগোরির রাজ্যকে জোরজবরদস্তি দখল করে আছে।’ বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে জীবনের এই ভিডিও বার্তার খবর জানাজানি হতে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে নতুন চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই। বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি প্রশাসনিক স্তরে। এরই মাঝে কেএলও সুপ্রিমোর ভিডিও বার্তা। ভিডিওটিতে শুধু তৃণমূলের সমালোচনা করা হয়নি। জীবন বিস্তর অভিযোগ এনেছেন। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এই সরকার কোচ কামতাপুরদের উপর ব্যাপক হারে লুটপাট চালাচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে এখানে কোচ রাজবংশীদের সংখ্যালঘু করে তোলার চেষ্টা করছে। এরা কোচ রাজবংশীদের চরম শত্রু। এই সরকার কোচ রাজবংশীদের উপর দলীয় ও পুলিশি সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ফলে কোচ রাজবংশীরা এই সরকারের পরাধীন হয়ে থাকতে চায় না।’ ভিডিওতে তিনি জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে কামতাপুরের সমস্ত কোচ রাজবংশী, আদিবাসী, গোর্খা, নস্যশেখ, বাঙালি সহ সমস্ত জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের হাত থেকে গ্রেটার কোচবিহার বা কামতাপুর রাজ্যকে উদ্ধার করার বার্তাও দিয়েছেন।
যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক (হিপ্পি) বলেন, ‘কোচবিহারের রাজবংশী মানুষদের যে আবেগ জেলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, সেটাকে আমরা অন্তর থেকে সম্মান করি। জীবন সিংহের বার্তা থেকে পরিষ্কার, তিনি বিজেপির অধীনে রয়েছেন। বিজেপি তাঁকে যা যা শিখিয়ে দিচ্ছে, বিজেপির এজেন্ট হিসাবে তিনি সে সব কথাই বলছেন। উনি এখন জঙ্গলে নেই। উনি হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছেই আছেন। এটা আমরা জানি।’ তাঁর বক্তব্য, উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অসম সরকারের নোটিশ পাঠানো নিয়ে এখানকার কোচ-রাজবংশীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের আন্দোলনের ফলে বিজেপি চাপে রয়েছে। আর সে কারণেই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপি জীবনকে সামনে এনেছে। তাই তাঁরা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তৃণমূলের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি ও বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলছেন, ‘তৃণমূল ভয় পাচ্ছে বলে সবকিছুতে বিজেপি জুজু দেখছে। জীবন সিংহ আলাদা সংগঠন করেন, তাঁকে বিজেপি সমস্ত কিছু শিখিয়ে দেবে? রাজবংশী ভোট আমাদের সঙ্গে রয়েছে বলেই তৃণমূলের এত ভয়।’