শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুজোকে জনসংযোগের অন্যতম ‘প্ল্যাটফর্ম’ বানাতে চাইছে রাজনৈতিক দলগুলি। তাতে অবশ্য শাসকদলের তুলনায় একেবারেই পিছিয়ে পড়েছে পদ্ম শিবির। প্রায় প্রতিটি পুজোর উদ্বোধনেই তৃণমূলের (TMC) নেতা-মন্ত্রীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিজেপির বিধায়ক বা নেতাদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ‘সবেধন নীলমণি’ হিসেবে বৃহস্পতিবার কোচবিহার শহরের একটি পুজোর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের। কিন্তু তা নিয়েও জলঘোলা শুরু হয়েছে। ফলে পুজোকে কেন্দ্র করে বিজেপির জনসংযোগের সুযোগ হাতছাড়া হল বলেই মনে করছেন অনেকে। ভোটের আগে পুজোকেন্দ্রিক জনসংযোগ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে একটি বড় সুযোগ। তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক সেই সুযোগকে কাজে লাগালেও বিজেপি সেই ফায়দা তুলতে পারছে না।
ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের প্রবণতা আগে না থাকলেও শেষ কয়েকবছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার অধিকাংশ বিগ বাজেটের পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করছেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি শাসকদলের নেতাদের ভিড় থাকছে। সেই সুযোগে কৌশলে জনসংযোগ সেরে নিচ্ছেন ঘাসফুলের নেতারা। পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী উদয়ন গুহ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়ের নামই বেশি দেখা যাচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে বহু পুজোর উদ্বোধনে দেখা যেত। এবার কোচবিহারে কোনও পুজোর উদ্বোধনেই তাঁকে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, দিনহাটার পুজোগুলি কার্যত উদয়ন গুহর নিয়ন্ত্রণেই থাকে। একাধিক পুজো কমিটিতেও তিনি রয়েছেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনিও জনসংযোগ সারছেন। উদয়নের কথায়, ‘রাজনীতির কোনও বিষয় নেই। আমরা সকলেই পুজোর আনন্দে মেতেছি।’
কোচবিহারে (Cooch Behar) একটি পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘আমাদের সবাই আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাই এসেছি। তাছাড়া আমরা সারাবছরই মানুষের সঙ্গে থাকি। বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা মানুষের সঙ্গে মেশেন না। তাই তাঁরা ডাকও পান না।’
পুজো প্যান্ডেলগুলিতে শাসকদলের নেতাদের যখন আনাগোনা লেগেই রয়েছে, তখন পদ্ম শিবিরকে জনসংযোগে দেখা যায়নি। তবে বিজেপি অবশ্য অভিযোগ করেছে, এর পেছনে প্রশাসন ও তৃণমূলের হাত রয়েছে। বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে’র বক্তব্য, ‘পুজো কমিটিগুলিকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে বিজেপির বিধায়কদের না ডাকা হয়। ডাকা হলে পুজোর অনুমতি, অনুদান দেওয়া হবে না। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে। তাই অনেকে ইচ্ছে থাকলেও আমাদের ডাকতে পারছে না।’ উদাহরণ দিয়ে নিখিলবাবু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কোচবিহারের পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া কালচারাল ক্লাব দুর্গোৎসব কমিটির পুজোর উদ্বোধনের জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারপরই নানা জায়গা থেকে পুজো কমিটিকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে তিনি উদ্বোধনে না আসেন। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে বিজেপির বিধায়করা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।