উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মহিলাদের শরীর থেকে জরায়ু বাদ দেওয়ার নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতি টোটাল ল্যাপারোস্কোপিক হিস্টেরেকটমি (TLH)। টিএলএইচ অনেক সময় এমন অবস্থায় করা হয়, যেখানে রোগীর উপসর্গ দূর করা, মানসিক ও শারীরিক স্বস্তি ফিরিয়ে আনা বা রোগের অগ্রগতি ঠেকানো জরুরি। লিখেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ভিনায়ক দাস।
ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি কী
এটি এক ধরনের মিনিমালি ইনভেসিভ (কম কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে হওয়া) অস্ত্রোপচার পদ্ধতি। এখানে পেটে বড় কাটার বদলে মাত্র ২–৪টি ছোট ছিদ্র করা হয় (প্রতি ছিদ্র প্রায় ১ সেন্টিমিটার)। সেই ছোট ছিদ্র দিয়ে একটি ক্যামেরা এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি ঢুকিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। ক্যামেরার মাধ্যমে ভিতরের ছবি একটি স্ক্রিনে দেখা যায়, যা সার্জনকে নিখুঁতভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
টোটাল ল্যাপারোস্কোপিক হিস্টেরেকটমি কী
টিএলএইচ এমন একটি অস্ত্রোপচার, যেখানে মহিলাদের জরায়ু এবং সার্ভিক্স অর্থাৎ গর্ভমুখ সম্পূর্ণভাবে ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে অপসারণ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ওভারি এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবও সরিয়ে ফেলা হয়, রোগভিত্তিক প্রয়োজনে।
টিএলএইচ কেন করা হয়
- ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড (জরায়ুর ভিতরের টিউমার), পলিপ হলে
- অতিরিক্ত রক্তপাত যা ওষুধে বন্ধ হয় না
- এন্ডোমিট্রিওসিস
- অ্যাডেনোমাইওসিস
- জরায়ুর নীচে নেমে আসা (প্রোল্যাপ্স)
- প্রি-ক্যানসার বা ক্যানসার হলে
- ডিম্বাশয় অপারেশন করার সময় জরায়ু বাদ দেওয়া হলে
টিএলএইচ করার পদ্ধতি
অস্ত্রোপচারটি সাধারণত জেনারেল অ্যানাস্থিশিয়াতে (অচেতন করে) করা হয় এবং সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। ধাপে ধাপে এটি হয় –
প্রথমে পেটে ছোট কয়েকটি ছিদ্র করা হয়। তারপর তাতে ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি ঢুকিয়ে ভিতরের অবস্থা দেখা হয়। এরপর জরায়ু ও সার্ভিক্স ধীরে ধীরে আলাদা করা হয়। জরায়ুটি যোনিপথ দিয়ে বের করে আনা হয়। ছিদ্রগুলো সেলাই করে বন্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে পারেন।
টিএলএইচের উপকারিতা
এই অস্ত্রোপচার ওপেন সার্জারির (পেট কেটে অপারেশন) তুলনায় আরামদায়ক এবং রোগীবান্ধব। তাছাড়া
দ্রুত সেরে ওঠা যায়ঃ অস্ত্রোপচারের পর সাধারণত ১–২ সপ্তাহের মধ্যে হালকা কাজ শুরু করা যায়, যেখানে ওপেন সার্জারিতে ৬–৮ সপ্তাহ লাগে।
কম ব্যথা ও অস্বস্তিঃ ছোট ছিদ্রের কারণে শরীরে কম ট্রমা হয়, তাই কম ব্যথা হয় ও কম ব্যথার ওষুধ লাগে।
অতি সূক্ষ্ম দাগঃ ছোট ছিদ্রের ফলে দাগ প্রায় বোঝাই যায় না।
অল্প সময় হাসপাতালে থাকতে হয়ঃ বেশিরভাগ রোগী এক রাত থাকলেই বাড়ি যেতে পারেন।
সংক্রমণের ঝুঁকি কমঃ ছোট ছিদ্র মানেই কম সংক্রমণের আশঙ্কা।
ভালো ভিজুয়ালাইজেশনঃ ক্যামেরার বড় ও স্পষ্ট ছবি দেখে সার্জন খুব নিখুঁতভাবে অস্ত্রোপচার করতে পারেন।
দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরাঃ হাঁটা, রান্না, কাজ – সবকিছুতে দ্রুত ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়।
টিএলএইচ নিরাপদ কি না
অবশ্যই। অধিকাংশ নারীর জন্য এটি এক নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি। অস্ত্রোপচারের সাধারণ কিছু ঝুঁকি যেমন রক্তপাত বা সংক্রমণ থাকলেও, ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে এই ঝুঁকি অনেক কম।
পরিশেষ বলব, সচেতন থাকুন, ভয় নয়। টিএলএইচ একটি উন্নত, সহজ, এবং শরীরবান্ধব পদ্ধতি। আপনার হিস্টেরেকটমি অপারেশন প্রয়োজন হলে আপনি গাইনি চিকিৎসকের সঙ্গে টিএলএইচ সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করুন। প্রশ্ন করুন। ভয় দূর করুন। কারণ, আধুনিক চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য শুধু রোগ সারানো নয়, রোগীর স্বস্তি ও মানসিক শান্তিও নিশ্চিত করা। সেদিক থেকে টিএলএইচ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।