শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ভারতীয় চায়ের (Tea) রপ্তানি গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছাতে চলেছে চলতি মরশুমে। ২০২৪-’২৫ আর্থিক বর্ষ শেষ হয়নি। টি বোর্ডের খসড়া পরিসংখ্যান বলছে গত এপ্রিল থেকে এবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি বৃদ্ধির পরিমাণ ১৪.১৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই পরিমাণ ছিল ১৩.৩২ শতাংশ। এই বৃদ্ধির প্রবণতা জানাচ্ছে পুরো অর্থবর্ষ মিলিয়ে মোট রপ্তানির পরিমাণ ২৬৯ মিলিয়ন কিলোগ্রামে পৌঁছাবে।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় টি বোর্ডের ২৫১তম সাধারণ সভার আলোচনায় এই বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে। দেশীয় চায়ের রপ্তানিকারক সংস্থা এশিয়ান টি কোম্পানির নির্দেশক মোহিত আগরওয়ালার কথায়, ‘এবার রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এর মূলে টি বোর্ডের স্বাস্থ্যবান্ধব চা তৈরিতে গাইডলাইন। চায়ের গুণগতমান বাড়ানোর ওপরও টি বোর্ড একাধিক পদক্ষেপ করেছিল। তারই ফল মিলছে।’
টি বোর্ডের সর্বশেষ খসড়া রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট রপ্তানির পরিমাণ ১৪১.৬১ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। গত বছরের ওই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৩৫.৯৭ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে অক্টোবর সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি হয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেন, কাজাখস্তানে। একসময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এই তিনটি দেশে রপ্তানির পরিমাণ ২৬.৫১ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। পাশাপাশি ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, আমেরিকা, ইংল্যান্ডে ওই সময়ে রপ্তানি হয় যথাক্রমে ২৩.৭৯, ২২.৯২, ৯.৮৮, ৮.৩১ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা।
চা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় চায়ের ক্রেতা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলির অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ লোহিত সাগর সংকট, ইরানের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা না থাকলে রপ্তানির পরিমাণ হয়তো এবছরই ৩০০ মিলিয়ন কিলোগ্রামে পৌঁছে যেত। ডুয়ার্স থেকে অর্থডক্স ও সিটিসি চা রপ্তানির লক্ষ্যও হাতে নিয়েছে শিল্প মহল (Tea Trade)।
চলতি মাসে চালু হতে চলা জলপাইগুড়ির নর্থবেঙ্গল টি অকশন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পুরজিৎ বক্সীগুপ্ত বলেন, ‘রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে কেবল যে বিদেশি মুদ্রার আয় বাড়ছে তা নয়। পাশাপাশি ঘরোয়া বাজারে চায়ের উদ্বৃত্ত জোগানের সমস্যাটিও ধীরে ধীরে কমে আসবে। ফলে দাম না পাওয়ার সমস্যাটিও দূর হবে বলে মনে করছি।’ রপ্তানির এই বৃদ্ধি চা শিল্পের নানা সমস্যার মাঝে আশার আলো বলে মনে করছেন অনেকেই।