প্রিয়দর্শিনী বিশ্বাস, শিলিগুড়ি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখেনি। চা শ্রমিকরা (Tea Employees) সুনীলের ওই কবিতা পড়েছেন কি না জানা নেই, তবে তেত্রিশ না হলেও তাঁরা এখন বলতেই পারেন, ১০ বছর কাটল, কেউ কথা রাখেনি।
২০১৫ সাল। ফেব্রুয়ারি মাস। গঠিত হয় মিনিমাম ওয়েজ অ্যাডভাইজারি কমিটি। দিনটা ২০ ফেব্রুয়ারি। উত্তরকন্যায় ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে লেখা হয়েছিল, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার জন্য ওই কমিটি কাজ করবে। মজুরি ঘোষণা হলেই এই চুক্তি অকার্যকর হবে। কিন্তু তারপর ১০ বছর কেটে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও একটা ২০ ফেব্রুয়ারি। অথচ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়নি।
তাই এটাকে ‘প্রতারণার ১০ বছর’ আখ্যা দিয়ে এবার পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে কালো ব্যাজ পরে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার কাজ করবেন শ্রমিকরা। বুধবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের নেতারা।
তরাই সংগ্রামী চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা তথা সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘চা শ্রমিকদের অবস্থা দিন-দিন আরও খারাপ হচ্ছে। ২০১৫ সালে মালিক, শ্রমিক এবং শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধিদের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে বলা হয়েছিল, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার। কিন্তু তা হল না। শ্রমিকরা এখন দিন প্রতি ২৫০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। পিএফ কেটে তাঁদের হাতে আসছে ২২০ টাকা মতো। আজকের দিনে এই টাকায় সংসার চালানো যায়!’
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে নতুন বছরে আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি তথা শাসকদলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি চালু করতে সরকার প্রস্তুত। ওরা (শ্রমিক ও মালিক পক্ষ) আগে সকলে মিলে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসুক। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ এই বিষয়ে এদিন সংগঠনগুলি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের দিক থেকে তারা পরিষ্কার।
২০১৫ সালে ওই চুক্তির পর একাধিকবার সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। আর এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
এবার ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোমর বেঁধে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনগুলি। বৃহস্পতিবার কালো ব্যাজ পরে কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সেই প্রস্তুতির শুরু বলে মন্তব্য করেছেন হিল প্ল্যান্টেশনস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতা শমীক চক্রবর্তী।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি চা বাগানের ৩০ শতাংশ জমি পর্যটনে ব্যবহারের কথা জানিয়েছে। তার বিরোধিতা করেছেন শমীক। তাঁর কথায়, ‘২৫০ টাকা মজুরি দিয়ে জীবন চলে না। তাই বাগানে অনেকে চাষবাস করেন। এভাবে জমি দখল করলে শ্রমিকদের জীবিকা, বসতি সব শেষ হয়ে যাবে।’