রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: চা গাছ (Tea Crops) উপড়ে ফেলে সেই জমিকে পরিত্যক্ত হিসাবে দেখিয়ে টি ট্যুরিজম প্রকল্পের জন্য ব্যবহারের ছক কষা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তরাইয়ের অনেক চা বাগানেই ইতিমধ্যেই এটা শুরু হয়েছে।
দাগাপুর চা বাগানেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে। এই বাগানের প্রায় ২০ একর জমি থেকে চা গাছ তুলে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ, একদিনে নয়, একটু একটু করে গত এক বছর ধরে রাস্তার পাশের বাগান থেকে চা গাছ এবং ছায়াগাছগুলি তুলে ফেলা হয়েছে। বাগান শ্রমিকদের অনেকেই বলছেন, বাগানকে ধ্বংস করে এখানে হোটেল, রিসর্ট, আবাসন তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। আগামীতে চা বাগান বলে কিছু থাকবে না। তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।
সিটুর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের বক্তব্য, ‘বাগান মালিকপক্ষ ছক কষেই রাতের অন্ধকারে চা গাছ উপড়ে ফেলে জমি ফাঁকা করেছে। এখন সেই জায়গা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে মুনাফা করবে। রাজ্য সরকারের ভুল নীতির জন্য চা শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব। যে জমি থেকে অন্যায়ভাবে চা গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে সেখানে পুনরায় নতুন চা গাছ পুঁততে হবে।’ বাগান ম্যানেজার সন্তু ছেত্রীর দাবি, ‘চা গাছ তুলে ফেলা হয়নি। ওই জমি দীর্ঘদিন ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে টি ট্যুরিজম প্রকল্প হবে।’ শিলিগুড়ির অতিরিক্ত শ্রম অধিকর্তা শ্যামল দত্ত পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
রাজ্য সরকার চা বাগানের পরিত্যক্ত জমির ৩০ শতাংশ নিয়ে সেখানে টি ট্যুরিজম প্রকল্প তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে। আর এই খবরেই বাগানে বাগানে জমি খালি করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তরাইয়ের অন্যতম পুেরানো দাগাপুর চা বাগানে একই কাণ্ড লক্ষ করা যাচ্ছে । শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে দার্জিলিং মোড় থেকে কিছুটা এগিয়েই ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কের খুব কাছেই এই চা বাগান। ঠিক এই জায়গাতেই বাগানের দুটি প্লটে প্রায় ২০ একর জমিতে গত কয়েক মাসে চা গাছ পুরোপুরি উপড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাম শ্রমিক সংগঠন সিটুর দাবি, মালিকপক্ষ রাস্তা সংলগ্ন জায়গায় বাগানের বিভিন্ন প্লটে ৩৬ একর জমি থেকে চা গাছ তুলে ফেলেছে।
মূল রাস্তার একপাশে চা কারখানা, অফিস এবং ম্যানেজারের বাংলো। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল উলটো দিকের বিশাল জমি থেকে চা গাছ তুলে ফেলা হয়েছে। পুরো জমি থেকে ছায়াগাছগুলিও কেটে ফেলায় কার্যত ধু-ধু মাঠ পড়ে রয়েছে। এই দুটি প্লটেই আবার বিক্ষিপ্তভাবে দু’চারটি করে চা গাছ এখনও রয়েছে, যেগুলিতে ফার্স্ট ফ্লাশের একটি কুঁড়ি দুটি পাতা সবুজ হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুকনো চা গাছ এবং ছায়াগাছও পড়ে রয়েছে। আইএনটিটিইউসির দার্জিলিং জেলা সভাপতি নির্জল দে বলেন, ‘তরাইতে কিছু অসাধু বাগান মালিক বাগানে পরিত্যক্ত জমি দেখানোর জন্য চা গাছ উপড়ে ফেলে দিচ্ছে। এমন অভিযোগ শুধু দাগাপুর নয় আরও বেশ কয়েকটি বাগান থেকে আসছে। আমরা যথাস্থানে বিষয়গুলি জানিয়েছি। আগামীতেও নজরদারি বাড়ানো হবে।’ বাগানে এভাবে চা গাছ তুলে ফেলে সেখানে বাণিজ্যিক প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনায় শ্রমিক মহল্লায় ক্ষোভ ক্রমশ চড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে।