শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা : ভারতীয় চায়ের রপ্তানি কমলেও বিদেশি চায়ের আমদানি বাড়ছে ভারতে। অ্যাডভান্স অথরাইজেশন স্কিমে আমদানির ওপর কোনও শুল্ক না থাকাতেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন চা শিল্পপতিরা। তাঁদের বক্তব্য, আমদানির কারণে জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। মার খাচ্ছে দেশীয় চায়ের বাজার। বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে এমনই বক্তব্য সামনে রেখে টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (টাই) আমদানি নীতির পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলল। চলতি বছর কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রকের আওতাধীন ডিরেক্টর জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)-এর কাছে সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। বিনা শুল্কের আমদানি উত্তরবঙ্গ তথা ভারতের চা শিল্পে কেমন প্রভাব ফেলছে, তা মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছে টাই। টাইয়ের সভাপতি সন্দীপ সিংহানিয়া বলেন, ‘চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ এখন সময়ের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করছি ডিজিএফটি সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে সদর্থক পদক্ষেপ করবে।’
টাই যে তথ্য সামনে এনেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতে চা আমদানি হয়েছে যথাক্রমে ১৫.৮৫, ২৩.৭৯, ২৬.৫১, ২৯.৮৪ ও ২৩.৬৫ মিলিয়ন কিলো। অর্থাৎ প্রত্যেক বছরই আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। কেনিয়া থেকে সস্তার চায়ের আমদানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে আফ্রিকান ওই দেশটি থেকে আমদানি ছিল ১৭.১৩ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। যা ২০২৩-এর তুলনায় একধাক্কায় ২২৬ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত কেনিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ ৩.৯ মিলিয়ন কিলো। ২০২৪ সালের ওই সময়ের তুলনায় ১১৭ শতাংশ বেশি। বছর ঘুরলে কেনিয়া থেকে কার্যত রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টাইয়ের বক্তব্য, জোগান কমানোর জন্য টি বোর্ডের তরফে গত বছর মরশুমের উৎপাদনের শেষ দিন কিছুটা এগিয়ে ৩০ নভেম্বর করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল এতে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে থাকে। গড়ে কিলোপ্রতি চায়ের দাম ৬০ টাকা করে কমে যায় গত বছর।
টাইয়ের আশঙ্কা, বিনা শুল্কের চায়ের আমদানি বাড়িয়ে তা দেশীয় চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে রপ্তানি হতে পারে। এতে বিশ্বের বাজারে ভারতীয় চা শিল্পের সুনাম নষ্ট হবে। স্থানীয় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। টাইয়ের দাবি, অ্যাডভান্স অথরাইজেশন স্কিম ও স্পেশাল ইকনমি জোনের আওতায় শুল্ক ছাড়া আমদানির যে সুবিধা রয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কান মডেলে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরি করা হোক। এছাড়া প্রয়োজন রয়েছে দেশের খাদ্য সুরক্ষার নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি (এফএসএসএআই)-র মানদণ্ড মেনে আমদানি, রপ্তানি অথবা উৎপাদন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা।