নয়াদিল্লি: সংবাদ (Information) প্রতিবেদন বা ভিডিও তৈরি করলেই দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি সৃষ্টি হয় না, এমন পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court docket)।
মঙ্গলবার বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, সাংবাদিকের লেখা বা ভিডিও শুধু এই কারণে সংশোধিত ‘দেশদ্রোহ’ আইনের আওতায় আসতে পারে না। ভারতীয় দণ্ডবিধির পুরোনো ১২৪এ ধারার বদলে নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে ভারতীয় ন্যায়সংহিতায় (বিএনএস)। সেই নতুন ধারা ১৫২-তে দেশদ্রোহিতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মতে, ওই ধারা অনুযায়ী সংবাদ প্রতিবেদন ‘মামলা করার মতো অপরাধ’ নয়।
অসম পুলিশের (Assam Police) দায়ের করা একটি মামলায় সংবাদ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’-এর সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন ও ‘ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিজম’-এর সদস্যদের গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা দিয়েছে আদালত। অভিযোগ ছিল, বরদারাজন জঙ্গি দমন অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় বিমান বাহিনীর ক্ষতির খবর প্রকাশ করে দেশদ্রোহিতার দৃষ্টান্ত রেখেছেন। সাংবাদিক জানান, তিনি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা কর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে, যার মধ্যে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত সামরিক অ্যাটাশে (প্রতিনিধি)-ও।
আদালতের প্রশ্ন, ‘শুধু প্রতিবেদন বা ভিডিও তৈরি করলেই কি সাংবাদিকদের মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতে হবে? এর জন্য কি গ্রেপ্তারের আদৌ প্রয়োজন আছে?’
অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, সাংবাদিকের দায়ের করা আবেদন আসলে দায় এড়ানোর কৌশল। তবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘সাংবাদিকদের আলাদা শ্রেণি হিসাবে দেখা না হলেও, একটি সংবাদ প্রতিবেদন কি সত্যিই দেশের ঐক্যের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক হুমকি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে? এটা তো অস্ত্র-গোলাবারুদ পাচারের মতো বিষয় নয়।’ বিচারপতিরা জানান, ১৫২ ধারায় কোন কাজ অপরাধ, তা নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। প্রতিটি ঘটনার ভিত্তিতে বিচার করতে হবে।
আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী নিত্য রামকৃষ্ণন দাবি করেন, নতুন ১৫২ ধারা আসলে পুরোনো ১২৪এ ধারারই সামান্য পরিবর্তিত রূপ, যা সাংবাদিকদের (journalist) হয়রানির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আদালত মনে করায়, যে কোনও ভালো আইন, এমনকি সাংবিধানিকভাবে বৈধ আইনও পুলিশ অপব্যবহার করতে পারে। তা-ই বলে আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা যায় না।
শেষপর্যন্ত আদালত এই মামলাটিকে এসজি বোম্বাতকারে’র দায়ের করা একই ধরনের অন্য একটি মামলার সঙ্গে একত্রে শুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।