সানি সরকার, শিলিগুড়ি : বেহাল জাতীয় সড়কে পুজো পর্যটনে শঙ্কা। ধস, ভাঙনের জেরে বন্ধ রয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, বিপজ্জনক অবস্থায় ৭১৭ এ জাতীয় সড়কও। ফলে সিকিমের অর্থনীতিতে তার প্রভাব তো পড়ছেই, বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বাংলায় স্থানীয় স্তরের উন্নয়নও। এমন পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিল হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এইচএইচটিডিএন)। দ্রুত জাতীয় সড়কের পরিস্থিতির বদল না ঘটলে যে তার প্রভাব পড়বে পুজো পর্যটনে, উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে। টানা তিনদিন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রেখে সোমবার থেকেই মেরামতির কাজ শুরু করেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)। এদিন শ্বেতিঝোরা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তা তৈরির জন্য পাহাড় কাটা চলছে। যথারীতি ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় প্রত্যেকটি গাড়ি চলাচল করছে লাভা হয়ে। চাপ বেড়েছে করোনেশন সেতুতে।
কখনও বিরিকদাড়ায় ধস, কখনও আবার তিস্তার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ছে ২৯ মাইল সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। ভূমিধসে রাস্তা ভেঙে তিস্তায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। যেমন, রবিবার শ্বেতিঝোরায় রাস্তার বড় একটা অংশ ভেঙে তিস্তায় পড়েছে ফলে বন্ধ হয়ে যায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। গেইলখোলা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ধসের পাশাপাশি বোল্ডার পড়ার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তা তৈরি ও মেরামতের জন্য রবিবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত সেবক ও চিত্রের মধ্যে রাস্তাটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এনএইচআইডিসিএল। সোমবার শ্বেতিঝোরায় পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়। গেইলখোলায় ধসের মাটি সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় রাস্তা মেরামতি করা হয়েছে। কিন্তু বারবার যখন তিস্তার গ্রাসে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন কেন নদী বরাবর গার্ডওয়াল তৈরি করে জাতীয় সড়কটি রক্ষা করা হবে না, প্রশ্ন উঠছে। তিস্তাবাজারের সুখবীর তামাং বলছেন, ‘তিস্তা শাসনে গার্ডওয়ালের দাবি আমরা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। কিন্তু কোনও কর্ণপাত করা হচ্ছে না। অথচ বারবার পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করে টাকা জলে ফেলা হচ্ছে।’
শুধু ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল অবস্থায় তা নয়, বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে ৭১৭ এ জাতীয় সড়কটিও। জাতীয় সড়কটির চুইখিম, লোলেগাঁও সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ধস ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে জাতীয় সড়কটিতে লাভা থেকে লোলেগাঁও পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এদিন অধিকাংশ গাড়ি লাভা হয়ে চলাচল করেছে। সিকিম ও শিলিগুড়ির মধ্যে গাড়ি চলাচল করেছে মুনসুং হয়ে। তবে ধসের জেরে বন্ধ রয়েছে ঋষি রোড।
জাতীয় সড়কের এমন বেহাল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এইচএইচটিডিএন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে পুজো পর্যটন শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যে যদি জাতীয় সড়কের পরিস্থিতি দিনের পর দিন বেহাল থাকে, তবে তার বড় প্রভাব পর্যটনে পড়তে বাধ্য। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’