Srinagar | শ্রীনগরের রাস্তায় আতঙ্কের পরিবেশ

Srinagar | শ্রীনগরের রাস্তায় আতঙ্কের পরিবেশ

শিক্ষা
Spread the love


বিশ্বজিৎ সাহা, শ্রীনগর: বুধবার ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৮টা। অন্যান্য দিন এসময় ভূস্বর্গের রাজধানী শ্রীনগরের (Srinagar) সমস্ত দোকানপাট খুলে যায়। পর্যটকরা সকাল থেকে ভিড় করেন। কিন্তু এদিনের সেই চেনা চিত্রটাই বদলে গিয়েছে গোটা উপত্যকাজুড়ে। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ।  প্রশস্ত রাস্তাগুলিও খাঁখাঁ করছে। বিগত দু’দশকে বনধের এমন চিত্র দেখেননি উপত্যকাবাসী।

মঙ্গলবার জঙ্গি হামলায় ২৭ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় এদিন শ্রীনগর সহ গোটা জম্মু-কাশ্মীরে স্বতঃস্ফূর্ত বনধ পালিত হয়। জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, ট্রান্সপোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ট্রেড ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন সংগঠন ওই বনধের ডাক দিয়েছে। গুলমার্গ থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত গোটা রাস্তা ঘুরে দেখা গেল ওষুধের দোকান এবং খাবারের দোকান ছাড়া খোলা নেই কিছুই। তবে রাস্তায় চোখে পড়েছে শ্রীনগরগামী পর্যটকবোঝাই বেশ কিছু যানবাহন এবং সেনা, আধাসেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের টহলদারি গাড়ি। প্রশিক্ষিত কুকুরের ঘোরাঘুরি। সবমিলিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ।

 পুলওয়ামা কাণ্ডের পর ভূস্বর্গ কাশ্মীর যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে সেই সময় পহলগামের ঘটনায় ফের ছন্দপতন যেন মেনেই নিতে পারছেন না উপত্যকার সাধারণ মানুষ। গুলমার্গ এবং শ্রীনগরের মাঝে অন্যতম হিল স্টেশন তানমার্গ। সকাল ন’টায় হোটেলে ফিরে আসা পর্যটকদের আশ্বস্ত করার ফাঁকে হোটেলের ম্যানেজার ইমতিয়াজ শেখ  বলছিলেন, ‘এই ঘটনার কোনও জবাব নেই আমাদের কাছে। মৃতদের পরিবারের সঙ্গে গোটা উপত্যকার মানুষ শোকস্তব্ধ। আমরা কোনও কিছু বলার ভাষা হারিয়েছি।’

তিন পুরুষ ধরে শ্রীনগরের বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী বলবীর সিং মেহেতা। এদিন আদালত বন্ধ থাকলেও স্পেশাল কোর্ট থাকায় সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে যাওয়ার পথে বলবীর বলছিলেন, ‘কেন এই ঘটনা ঘটল তার দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। শান্ত উপত্যকা কোনওমতেই আর অশান্ত হতে দেওয়া উচিত নয় প্রশাসনের।’

প্রতিবছর মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মরশুম কাশ্মীর উপত্যকা। পর্যটকরা যাতে অসুবিধায় না পড়েন সেজন্য ট্যাক্সি ইউনিয়ন এদিন ফ্রি সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছিল। ফ্রি সার্ভিস না হলেও অটোচালকরাও এদিন পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই রাস্তায় ছিলেন। বনধে শ্রীনগরের ব্যস্ততম লালচকও ছিল শুনসান। এদিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ যাত্রীদের অপেক্ষায় লালচক ঘড়ি মোড়ে বসে থাকা দুই অটোচালক রামবাগের বাসিন্দা নাসির খান এবং জাহাঙ্গির চকের বেলাল দারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। পহলগামের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলতেই দুজনের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া, ‘সত্যনাস হো গয়া’। ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে থাকায় কী হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও বেলাল দারের কথায়, ‘শুনেছি যেখানে জঙ্গি হামলা হয়েছে সেখানে সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তা রয়েছে। রয়েছে মিলিটারি ক্যাম্প। তা সত্ত্বেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা তারাই বলতে পারবে। তবে আমাদের জীবিকার যে সমস্যা তৈরি হল তা স্বাভাবিক হতে যে কত সময় লাগবে কে জানে।’

নাসির খানের পাঁচ সদস্যের সংসার চলে অটো চালিয়ে। নাসির খানের কথায়, অটো পরিষেবা পর্যটকদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকা আয় হয় অথচ বুধবার বিকেল পর্যন্ত আয় হয়েছে মাত্র ৩০০ টাকা।

শ্রীনগরের অন্যতম ব্যস্ত বাজার গনিখান মার্কেট। শুধুমাত্র খাবারের দোকান এবং ওষুধের দোকান ছাড়া কয়েকশো দোকানের শাটার এদিন নামানো ছিল। দুপুর দুটো নাগাদ রাস্তার ওপরেই ক্রিকেট খেলতে ব্যস্ত কিছু কিশোর। রাস্তার পাশে নিজের খুচরো ওষুধের দোকান খুলে ক্রেতার অপেক্ষায় খুরশিদ ওয়ানি। ২০  বছরের ওপর ওষুধের ব্যবসা খুরশিদের। খুরশিদ বলেন, ‘কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এই অশান্তি চায় না। তা সত্ত্বেও বারবার অশান্ত হয় এই উপত্যকা। যার খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষকে, এর উত্তর আমরা চাই।’

এদিনের বনধ নিয়ে শ্রীনগরের বাসিন্দা তরুণ আদিল ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমরা জানি প্যালেস্তাইনের ওপর হামলার ঘটনার প্রতীকী প্রতিবাদ করে যেমন কোনও ফল হয় না, ঠিক এই ঘটনারও কোনও ফল হবে বলে আমি মনে করি না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *