নয়াদিল্লি: দিল্লি হিংসার ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত তিহার জেলে বন্দি সমাজকর্মী ও গবেষক উমর খালিদ তাঁর পাঁচ বছরের বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন একটি চিঠিতে। তাঁর কারাবাসের কাহিনীতে নিঃসঙ্গ লড়াইয়ের কথা উঠে এসেছে।
খালিদ লেখেন, রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়ভস্কির বই ‘দ্য হাউস অফ দ্য ডেড’ পড়ে তিনি অবাক হয়েছেন যে, ১৫০ বছর আগে জারের রাশিয়ার জেলজীবনের সঙ্গে আজকের ভারতীয় জেলের কত মিল! দস্তয়ভস্কির বই থেকে ‘আমরা বেঁচে থাকলেও জীবিত নই, আবার কবরেও যাইনি, তবুও মৃত’ পংক্তিটি উদ্ধৃত করে খালিদ বলেছেন, লেখকের এই উপলব্ধি যেন আজকের তিহারেও প্রতিধ্বনিত হয়।
খালিদ জানান, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি তিহার জেলে বন্দি। পাঁচ বছরের কাছাকাছি সময় পেরিয়ে গেলেও দিনের পর দিন তিনি অপেক্ষা করে থেকেছেন আগামী কোনও জামিন শুনানির দিকে চেয়ে। সেই ছোট ছোট দিন গোনাই তাঁকে টিকিয়ে রেখেছে। তাঁর মতে, বন্দিদের জীবনে আশা বলতে কিছু নেই। একজন মুক্ত মানুষ আশায় বাঁচেন, কিন্তু কাজও করেন। আর বন্দিদের আশায় বেঁচে থাকাই যেন একমাত্র কাজ। দস্তয়ভস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘বিনা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আশা না থাকলে, মানুষ ভিতরে ভিতরে এক দানবে পরিণত হয়।’
তবে খালিদের মতে, জেলে আশা রাখা একটা বিপজ্জনক কাজ। যত বেশি আশা, ভেঙে পড়ার ঝুঁকিও তত বেশি। তাই তিনি চেষ্টা করেন আশাহীন থাকতে। তবু তিনি বলেন, আশার শক্তি এতই প্রবল যে, সবচেয়ে নিরাশ পরিস্থিতিতেও বন্দিরা সেটাই আঁকড়ে থাকেন।
এক সহবন্দির কথা লিখেছেন খালিদ। ওই বন্দি গত ২৯ বছর ধরে জেলে রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় তিনি মুক্তি পান। তবে শর্ত ছিল- জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে, কোনও প্যারোল বা মুক্তির সম্ভাবনা নেই।
এই বন্দি সম্পর্কে খালিদ লেখেন, ‘ওরা প্রধানমন্ত্রীকে মেরেছিল। কিন্তু আমি তো কাউকে মারিনি।’ তিনি হয়তো আশা করছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দণ্ডও হালকা হবে।
খালিদ দস্তয়ভস্কির উক্তি টেনে বলেন, কারাগারে যারা অনেক বছর পার করেছে, তারা আর পালানোর চেষ্টা করে না। তারা আশা করে, হয়তো একদিন আদালত তাদের মুক্তি দেবে।
শেষে খালিদ লিখেছেন, এই পাঁচ বছরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। মানুষ পিএইচডি শেষ করে চাকরি পায়, প্রেম করে বিয়ে করে, সন্তানের বাবা-মা হয়, গাজায় গণহত্যা ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যায়, বাবা-মা বুড়িয়ে যান। তাহলে এই সময় কি মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়?