Siliguri | শিলিগুড়ির ডাকাতিতে বিহার-যোগ

Siliguri | শিলিগুড়ির ডাকাতিতে বিহার-যোগ

শিক্ষা
Spread the love


শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : শিলিগুড়িতে গয়নার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই চমকে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে আসছে। রবিবার শিলিগুড়িতে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনায় যে দলটি যুক্ত, বিহারের এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ সেটির মাথা বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিই এই দলটিকে টাকাপয়সা দিয়ে চালায়। দলের সদস্যরা আট মাস আগেই শিলিগুড়িতে এসেছিল বলে ডাকাতির ঘটনায় ধৃত দুই দুষ্কৃতী মহম্মদ সাফিক খান ও মহম্মদ সামশাদকে দফায় দফায় জেরা করে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ জানতে পেরেছে।

গ্যাংয়ের এক পান্ডা বিহার থেকে নিয়মিত যাওয়া-আসা করে যাবতীয় প্ল্যানিং করত। এই পান্ডার মাধ্যমেই প্রভাবশালী সেই ব্যক্তির টাকা দলের সদস্যদের কাছে পৌঁছে যেত। ডাকাতির জন্য ওই পান্ডাই হিলকার্ট রোডের দোকানটিকে বেছে নিয়েছিল। তার প্ল্যানিংয়েই গোটা অপারেশনটি সারা হয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন সমস্ত পরিকল্পনা ছকে নেওয়ার পর দলের সদস্যরা ফাঁসিদেওয়া এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। সেখান থেকে এসেই তারা শহরে সোনার দোকানটিতে নিয়মিতভাবে নজরদারি চালাত। ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ ফাঁসিদেওয়ায় গিয়ে তল্লাশি চালায়। তবে সেখানে ওই দলের কাউকে পাওয়া যায়নি।

ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে সোমবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তুলে পুলিশ তাদের সাতদিনের হেপাজতে নিয়েছে। পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর এদিন সকালে শিলিগুড়ি থানায় এসে ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন। ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিংও পরে সেখানে যান। ওই দুই দুষ্কৃতীকে জেরা করার পাশাপাশি িতনি দীর্ঘক্ষণ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করেন।  ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের মুখের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ছবি সবার মোবাইল ফোনে ঘুরছে। অথচ সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও পুলিশ দুষ্কৃতী চক্রের বাকিদের কেন ধরতে পারল না সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। পাশাপাশি, তারা এতদিন ধরে শহরে রেইকি চালালেও পুলিশ তা জানতে পারল না কেন সেটাও প্রশ্ন। প্রশ্ন করা হলে পুলিশ কমিশনারের জবাব, ‘তদন্ত করে সবটাই আমরা বলব।’

শিলিগুড়িতে ডাকাতি করা গ্যাংটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গয়নার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত। সহজে অপারেশন সারতে দলে মহিলা সদস্যদেরও নেওয়া হয়। হিলকার্ট রোড ডাকাতির ঘটনায় এজন্য দুই মহিলাকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। লুটের কাজ সারার পর এই মহিলাদের কাজ বলতে স্রেফ ‘গায়েব’ হয়ে যাওয়া। শিলিগুড়ির ডাকাতির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তারা কোথায় গিয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ কার্যত অন্ধকারে। তদন্তকারীদের অনুমান, হয় তারা বাসে অথবা ট্রেনে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারা দিল্লির দিকে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের খোঁজে পুলিশ দিল্লিতে টিম পাঠাচ্ছে। দুষ্কৃতীদের দলের বাকিরা ইতিমধ্যেই ভিনরাজ্যে পালিয়ে গিয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। তাদেরও খোঁজ চলছে।

দলটি যেভাবে চালানো হয় তা জানতে পেরে তদন্তকারীরা অবাক। দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের একাধিক জায়গায় ডাকাতির মামলা রয়েছে। তারা একাধিক জায়গায় জেলও খেটেছে। জেলে থাকাকালীনই একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্রেই এই গ্যাংয়ের সৃষ্টি। গ্যাংটি মূলত  বিহারের হলেও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সদস্য হিসেবে দুষ্কৃতীদের ভাড়া নেওয়া হয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া রাজস্থানের সাফিক খানকেও এভাবেই এই দলে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।

গোয়েন্দা সহ পুলিশের বিভিন্ন দল এদিন শিলিগুড়ির ওই গয়নার দোকানটিতে যান। গত কয়েক মাসে ওই দোকানের আশপাশে সন্দেহজনক কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে কি না সে বিষয়ে তাঁরা আশপাশের ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন করেন। অভিনব আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ীর উত্তর ছিল, ‘না দেখিনি। দেখলে অনেক আগেই আমরা সাবধান হয়ে যেতাম।’ আর এই সূত্রেই তদন্তকারীদের ধারণা, যাতে কোনও সন্দেহ না হয় সেভাবেই গোটা প্ল্যানিং সারা হয়েছিল। এই ঘটনায় তারা বিহারের ওই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের পাকা মাথার ছোঁয়া খুঁজে পেয়েছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *