শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : উত্তরপ্রদেশের মুসকান রাস্তোগির কথা মনে আছে? পরকীয়ায় জড়িয়ে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মাসখানেক আগেই সব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক হইচই হয়েছিল মুসকানের ওই ঘটনাটে ঘিরে। এবার অনেকটা সেই ধাঁচেই পরকীয়া সম্পর্কের জন্য স্বামীকে খুন করার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়িতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই স্বামীর নাম পুতুল গুপ্ত (৩৮)। অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী মনীষা গুপ্ত খুন করেছে পুতুলকে।
পুতুল ও মনীষা থাকতেন দার্জিলিং মোড়ে। তবে তাঁকে বিহারে নিয়ে গিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে মনীষার বিরুদ্ধে। মনীষার বাপের বাড়ি বিহারে। আরও অভিযোগ, খবর পেয়ে পুতুলের বাড়ির লোকজন বিহারে যাওয়ার আগেই স্বামীর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মনীষার পরিবার। শেষমেশ বিহার পুলিশের হস্তক্ষেপে দেহ নিয়ে শিলিগুড়িতে ফেরার পর মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন পুতুলের পরিবারের সদস্যরা। পুতুলদের বাড়ির উলটোপাশেই মনীষার প্রেমিকের দোকান। সেই দোকান ভাঙচুর করতে যান এলাকার বাসিন্দারা। আবার ওই দোকানের পেছনেই রয়েছে প্রেমিকের বাড়ি। ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এলাকায় নতুন করে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেকারণে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এলাকার ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
প্রধাননগর থানার আইসি বাসুদেব সরকার বলেন, ‘ওরা এখনও আমাদের কাছে আসেনি। শুনেছি, পরকীয়া সংক্রান্ত ঝামেলা ছিল। এলাকায় যাতে কোনও অশান্তি না হয়, সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’
পুতুলের বাবা রামবিলাস গুপ্ত জানালেন, বিহারের বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা মনীষা গুপ্তকে বিয়ে করেন দার্জিলিং মোড় সংলগ্ন এলাকার পুতুল। তাঁদের সন্তানও রয়েছে। পুতুল ও মনীষা দার্জিলিং মোড়ে সবজির ব্যবসা করতেন। উলটোদিকেই রয়েছে মনীষার প্রেমিকের র্যাশনের দোকান। সেই দোকানে যাতায়াত থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে চলতে চলতে পুতুল একসময় মনীষাকে হাতেনাতে পাকড়াও করে ফেলেন। তারপর মনীষা বেগুসরাইয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান। পিছন পিছন যান সেই প্রেমিকও।
সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় ধরে বেগুসরাইয়ে থাকার পর মনীষা পুতুলের কাছে ফিরে আসেন। তবে পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশীরা তাঁকে কার্যত একঘরে করে রেখেছিলেন। এরপর মনীষা পুতুলকে নিয়ে বেগুসরাইয়ে চলে যান। সেখানে পৌঁছে মনীষা আবার পুতুলকে নিয়ে সালিশি সভা করেন বলে অভিযোগ। এদিকে, গত বুধবার পুতুলের দাদার সঙ্গে মনীষার প্রেমিকের হাতাহাতি হয় দার্জিলিং মোড়ে। পুতুলের পরিবারের অভিযোগ, সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পুতুলকে খুন করা হয়। বাড়ির লোকজন খবর পায়, শনিবার সকালে পুতুলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। রামবিলাস বলেন, ‘মনীষার পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ফোন করে জানায়। আমরা পৌঁছানোর আগেই পুতুলের ময়নাতদন্ত হয়ে যায়। আমরা শ্মশানে পৌঁছে দেখি, ছেলের দেহ চিতায় তোলা হচ্ছে।’
শ্মশানেই মনীষার পরিবারের সঙ্গে তুলকালাম কাণ্ড বাধে পুতুলের পরিবারের। শেষমেশ বিহার পুলিশের হস্তক্ষেপে রবিবার সকালে পুতুলের দেহ দার্জিলিং মোড়ের বাড়িতে নিয়ে আসেন রামবিলাসরা। এরপরই এদিন এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে প্রধাননগর থানার পুলিশবাহিনী এলাকায় উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রামবিলাসের দাবি, ‘বিহার পুলিশ আমাদের প্রথম থেকেই সহযোগিতা করেনি। তাই সেখান থেকে ছেলের মৃত্যুর আসল কারণ আমরা জানতে পারব না। শিলিগুড়ির পুলিশের কাছেই আমরা তাই এব্যাপারে দ্বারস্থ হব, যাতে আমরা মৃত্যুর আসল কারণ জানতে পারি।’