শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : সকাল থেকেই কার্যত নিষিদ্ধ এলাকা। মাটিগাড়া সংলগ্ন শপিং মলে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা স্পা এলাকা এড়িয়ে চলেন মলে আসা পরিবারগুলি। ক্রেতা ধরার জন্য চোখের ইশারা, ডাকাডাকি অনেক সময়ই মাত্রা ছাড়ায় বলে অভিযোগ। স্পাগুলোর একাংশে যে অবৈধ কার্যকলাপ চলে, সেটা সকলেরই জানা রয়েছে। স্পা এলাকার পরিবেশ সেটা আরও স্পষ্ট করে। মাঝেমধ্যে পুলিশের অভিযান হয় ঠিকই, স্পা-এর আড়ালে মধুচক্র চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে। তবে প্রশ্ন, এসব পাকাপাকিভাবে বন্ধ করতে কোনও ব্যবস্থা নেই কেন? প্রশ্ন উঠছে শপিং মল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাতেও।
স্পা মালিকদের একাংশ বিভিন্ন ফিন্যান্স কোম্পানি থেকে বিপুল ঋণও নিয়েছেন। বুধবার এরকম একটি স্পা-এর দরজায় আদালতের নির্দেশে তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফিন্যান্স কোম্পানির তরফে আইনজীবী রোশন ঝা ও প্রভাত ঝা’র কথায়, সুশীলা জৈন নামে এক মহিলার অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন কিস্তি দেওয়ার পর আর লোন শোধ করতে পারেননি তিনি। আদালতের নির্দেশে পুলিশের সহযোগিতায় বুধবার এই সম্পত্তি ক্রোক করা হল।
ওই দুই আইনজীবী জানান, ২০১৮ সালে চার কোটি টাকার লোন নেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে ওই অ্যাকাউন্ট ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট’ (এনপিএ) হয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ হয় ফিন্যান্স কোম্পানি। মার্চ মাসে আদালত রায় দেওয়ার পরে সুশীলা জৈন ডেট রিকভারি ট্রাইবিউনাল (ডিআরডি)-এর দ্বারস্থ হন। ডিআরডি তাদের রােয় কোনও রিলিফ দেয়নি সুশীলাকে। এরপর শিলিগুড়ি মহকুমা আদালত গত মে মাসে শপিং মলের প্রথম তলায় থাকা এই স্পা ক্রোক করার নির্দেশ দেয়। এদিন মাটিগাড়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় এই স্পা ক্রোক করা হয়।
মাটিগাড়া থানার পুলিশের উপস্থিতিতে যখন ক্রোক প্রক্রিয়া চলছে, তখন শপিং মলের নীচের তলায় একের পর এক স্পা-এর একেবারে অন্য পরিস্থিতি। দিনেরবেলাতেই দেখা গেল, প্রতিটি স্পা-এর সামনেই একজন করে মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই এলাকা পেরোনোর সময়, আওয়াজ এল, ‘স্পা-এর ভেতরে চলে আসুন। সমস্ত কাজ হয়ে যাবে।’
প্রায়ই মলে আসা অনিন্দিতা দাসের কথায়, ‘বাড়ির ছেলেমেয়েদের অনেকসময় মলে ঘোরাতে নিয়ে আসি। স্পা-এর ওই চত্বরে সত্যি কথা বলতে যাওয়াই যায় না। ওখানে পরিবেশ আলাদা। একটা মলের একটা অংশে কেন এধরনের পরিস্থিতি থাকবে, সেটাই তো সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’ উত্তরায়ণের আবাসিকদের একাংশের কথায়, সকাল থেকেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ থাকে। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে অভিযান চালায়। নিয়মিত অভিযান চালানো হলে তো এই পরিস্থিতি থাকে না। মল কর্তৃপক্ষেরই বা নজরদারি কোথায়?’ যদিও এব্যাপারে মল কর্তৃপক্ষের কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ওয়েস্ট) বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের অবশ্য বক্তব্য, ‘আমাদের সাদা পোশাকের পুলিশ থেকে শুরু করে, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট সবাই সজাগ রয়েছে। ওই মলে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’