শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির (Siliguri) মাল্লাগুড়ির সংকটমোচন মন্দির সংলগ্ন ফুটপাথের হোটেলে তখন রান্নায় ব্যস্ত রতন ভদ্র, সোমবালা বর্মন। সামনের টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছিলেন অর্জুন দাস, প্রভাত সরকাররা। হঠাৎই উসকোখুসকো চুলের এক ভবঘুরে এসে হাজির সেখানে। হাতে ছোট একটা বস্তা। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন, ‘আমি বাচ্চা পেয়েছি। দেখবে তো এসো।’
কথাটা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সেখানে থাকা সকলেই। বস্তায় উঁকি দিতেই চোখ ছানাবড়া সোমবালার। তার ভেতরে কাপড়ে মোড়া একটি শিশু। ততক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছে কিছুটা দূরে থাকা প্রধাননগর থানার পুলিশকর্মীদের কাছে। পুলিশ এসে পৌঁছাতেই এক তরুণী ওই ছোট বস্তা থেকে শিশুটিকে বের করেন। প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন, শিশুটি হয়তো মৃত। কিন্তু ব্যাগ থেকে শিশুটিকে বের করতেই হকচকিয়ে ওঠেন রোশনি খাতুন নামে ওই তরুণী। চিৎকার করে ওঠেন, ‘আরে, বাচ্চাটা তো বেঁচে আছে।’ এরপর আর দেরি করেনি পুলিশ। শিশুটিকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। আসেন রোশনিরাও। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন একরত্তিটি।
হাসপাতালের চিকিৎসক এস মণ্ডল বলছেন, ‘শিশুকন্যার বয়স মাত্র একদিন। শিশুটির মাথায় জল জমে রয়েছে।’ প্রশ্ন উঠছে, অসুস্থ থাকার কারণেই কি ওই শিশুকে পরিবারের তরফে ফেলে দেওয়া হয়েছে? নাকি কন্যাসন্তান জন্মানোয় ঠাঁই হয়েছে আস্তাকুঁড়েতে? যদিও এইসব প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
শিশুটিকে নিয়ে আসা ওই ভবঘুরেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথমে আটক করেছিল প্রধাননগর থানার পুলিশ (Pradhan Nagar Police)। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন।
প্রধাননগর থানার আইসি বাসুদেব সরকারের কথায়, ‘কোনও থানায় কোনও পরিবারের তরফে শিশু হারিয়ে যাওয়া বা ওই সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েনি। ওই ব্যক্তি চাঁদমণি মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে ছোট বস্তাটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে বলে জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তির শিশু বিক্রি বা ওই সংক্রান্ত কোনও উদ্দেশ্য ধরা পড়েনি। আমাদের ধারণা, পরিবারই বাচ্চাটিকে ফেলে গিয়েছে।’
রোশনিও পুলিশের সঙ্গে একমত। তিনি বলছেন, ‘বাচ্চাটিকে প্রথম যখন বস্তা থেকে বের করি, দেখেই মায়া লাগছিল। বাচ্চাটির মাথায় চোটও রয়েছে। সম্ভবত বাচ্চাটি অসুস্থ বলেই পরিবার ফেলে গিয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই ভবঘুরে মাল্লাগুড়ির সংকটমোচন মন্দিরের কাছেই রাত কাটায়। এদিক-ওদিকে যা পান, কুড়িয়ে এনে বিক্রি করেন। শুক্রবারও সেজন্য মাটিগাড়ায় গিয়েছিলেন তিনি। দুপুর একটা নাগাদ জিনিসপত্র কুড়িয়ে আস্তানায় চলে আসেন। সোমবালার কথায়, ‘ভাগ্যিস, ও বস্তা খুলে দেখিয়েছিল। নাহলে বাচ্চাটাকে হয়তো বাঁচানোই যেত না।’