সাগর বাগচী,শিলিগুড়ি: শীতলকুচির পর এবার শিলিগুড়ি। অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রের কাছে ২০ টাকা চেয়ে তাকে বিদ্যালয়ের মধ্যেই বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল তারই সহপাঠীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, পুরো ঘটনাটি নির্যাতিত ছাত্রের এক বন্ধুকে দিয়ে নিজের মোবাইলে রেকর্ড করায় অভিযুক্ত ছাত্র। এরপর সেই ‘র্যাগিং’-এর ভিডিও অভিযুক্ত ছাত্র নিজের সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে। ভিডিওটিতে (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ) দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্ত ছাত্র সহাপাঠীর মাথার পেছন দিকে চড় মারছে। শিলিগুড়ির একটি বহু পুরনো সরকারি স্কুলের এই ঘটনায় স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমনকি নির্যাতিত ছাত্র ঘটনাটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই নিগৃত ছাত্র আর স্কুলে যেতে সাহস পাচ্ছে না। ওই ছাত্রের অভিভাবকরাও ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর সাহস পাচ্ছেন না। যদিও ঘটনার পর অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের কাছেও সেই ভিডিও ইতিমধ্যে পৌছে গিয়েছে। মেয়রের কথায়, ‘ভিডিওটি দেখেছি। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত বলেন, ‘ভিডিওটি দেখে ছাত্রটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার অভিভাবক সহ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তারপরই গোটা ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
ঘটনা প্রসঙ্গে নির্যাতিত ছাত্র বলে, ‘সিঁড়ির যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই সেখানে নিয়ে গিয়ে আমায় মারধর করা হয়েছে। ওই সহপাঠী শুধু আামার কাছ থেকে টাকা চায়। আমার অন্য এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা চেয়ে তার পেটে ওই ছাত্র লাথি মেরেছিল। আমার ওই বন্ধু ব্যাথায় কেঁদে ফেলেছিল। আমি আর এই স্কুলে পড়াশোনা করব না। আবার স্কুলে গেলে আবার মারবে। সব কথা শিক্ষকদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষকরা বলেন, বন্ধুরা নিজেদের ব্যাপার নিজেরা কথা বলে মিটিয়ে নে।’
ঘটনার পর থেকে ওই সরকারি স্কুলের ওপর কার্যত ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন নির্যাতিত ছাত্রের অভিভাবক। ধারদেনা করে হলেও তাঁরা নির্যাতিত ছাত্রকে অন্য স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে চাইছেন। এই বিষয়ে নির্যাতিত ছাত্রের মায়ের বক্তব্য, ‘আমরা যাতে র্যাগিং-এর কথা না বলি সেই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা আমাদের সতর্ক করেছেন। এমনিকে ছেলেকে অন্য স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে বলেছেন। প্রতিদিন আমার ছেলের কাছ টাকা চায় ওই ছাত্র। স্কুলে গিয়ে অন্য অভিভাবক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিভাবকরা জানান তাঁদের ছেলেদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটছে। চার পাঁচজন অভিভাবক ছেলেদের বের করে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারনে আমার ছেলেকে অন্য স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে পারছি না।’