রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : আগামী বছর বিধানসভা ভোট। সেদিকে লক্ষ রেখে দলীয় সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার দলের শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় বিজেপি সব মণ্ডল সভাপতির নাম ঘোষণাই করতে পারল না। অথচ এই সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চোপড়া বাদে বাকি চারটি বিধানসভা কেন্দ্রই তো বিজেপির দখলে। এমনকি শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের নিজের মণ্ডলের সভাপতির নামও এদিন ঘোষণা করা হয়নি!
এমনটা হল কেন? বিজেপির বর্তমান জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিধায়কদের মতভেদের জেরেই এই পরিস্থিতি বলে দলের একাংশ দাবি করছে। তবে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলেছেন, ‘২৮টি মণ্ডলের মধ্যে ১৪টি ঘোষণা হয়েছে। বাকিগুলিও দ্রুত ঘোষণা হবে।’
শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকরের নিজের এলাকা, ৪ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি ছিলেন সুশান্ত বসাক। সূত্রের খবর, পুনরায় তাঁর নামই পাঠিয়েছিল জেলা নেতৃত্ব। কেননা সুশান্ত শংকরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কিন্তু এদিনের তালিকায় শংকরের মণ্ডলের সভাপতি পদে কারও নাম নেই। যা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি শংকরের বিরুদ্ধে গিয়েই তাঁর ঘনিষ্ঠকে ছেঁটে ফেলল বিজেপি? শংকর অবশ্য এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, কয়েক দিনের মধ্যে নিশ্চই বাকিদের নাম ঘোষণা হবে।
রবিবার গোটা রাজ্যেই জেলা ধরে ধরে বিজেপি প্রতিটি মণ্ডলের সভাপতিদের নাম ঘোষণা করেছে। শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া–নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, ডাবগ্রাম–ফুলবাড়ি এবং চোপড়া বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট মণ্ডলের সংখ্যা ২৮। যার মধ্যে এদিন ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪টি মণ্ডলের সভাপতির নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এদিন প্রকাশিত তালিকায় ডাবগ্রাম–ফুলবাড়িতে দুটি, শিলিগুড়িতে একটি, মাটিগাড়া–নকশালবাড়িতে তিনটি এবং ফাঁসিদেওয়ায় তিনটি নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়েছে।
শিলিগুড়িতে পাঁচটির মধ্যে দুটি, মাটিগাড়া–নকশালবাড়িতে ন’টির মধ্যে তিনটি, ফাঁসিদেওয়ায় সাতটির মধ্যে চারটি, ডাবগ্রাম–ফুলবাড়িতে তিনটির মধ্যে একটি এবং চোপড়ার চারটির একটিও মণ্ডল সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি।
তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপটে চোপড়ায় বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই ধুঁকে ধুঁকে চলছে, এটা সবার জানা। কিন্তু বাকি চারটি বিধানসভায় ক্ষমতায় থেকেও কেন মণ্ডল সভাপতির নামের তালিকা একলপ্তে ঘোষণা করা গেল না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে শংকর বলেছেন, ‘আমি আলিপুরদুয়ারের দায়িত্বে আছি। শিলিগুড়িটা ভালো বলতে পারব না। তবে, দলের অনেক নিয়মকানুন মেনে মণ্ডল সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে সেটা করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে। বাকি মণ্ডলগুলিতেও নিশ্চই দ্রুত সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে।’
মণ্ডল সভাপতি মনোনয়নের জন্য রাজ্য নেতৃত্ব প্রতিটি মণ্ডলের জন্য একজন করে নির্বাচনি আধিকারিক ঠিক করে দিয়েছিল। সেই নির্বাচনি আধিকারিক সংশ্লিষ্ট মণ্ডলের সমস্ত স্তরের কার্যকর্তার সঙ্গে কথা বলে মণ্ডল সভাপতি হিসাবে কয়েকটি নাম তুলে আনেন। সেই নামের তালিকা নিয়ে জেলায় বৈঠক হয়। তার পরেই নামের তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে পাঠানো সেই তালিকার সব নামকে অনুমোদন দিল না রাজ্য নেতৃত্ব।