রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : টক টু মেয়র নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। এই কর্মসূচিকে মেয়র পাখির চোখ করে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, মেয়র সেখানে সমস্ত আধিকারিকদের নিয়ে বসেন। নিকাশিনালার মুখ বন্ধ থেকে বেআইনি নির্মাণ ভাঙা, ফোনে যে কোনও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ‘অ্যাকশন’-এর দাওয়াই দেন। কিন্তু বোর্ড মিটিং হোক বা কাউন্সিলারদের জমা দেওয়া অভিযোগ, উন্নয়নের প্রস্তাব কিছুই গুরুত্ব পাচ্ছে না। তবে, সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মেয়র গৌতম দেব। তাঁর যুক্তি, ‘সবার সব দাবি সবসময় মানা সম্ভব নয়। তবে, বিরোধীদের প্রচুর দাবি মেনে নিয়ে কাজ হয়েছে। আমাদের কাছে সমস্তটাই রেকর্ড রয়েছে। বিরোধী কাউন্সিলাররা এলে দেখিয়ে দেব।’
১০১ এপিসোড পার করেছে গৌতম দেবের টক টু মেয়র কর্মসূচি। প্রতি সপ্তাহে শনিবার এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষ সমস্যা নিয়ে ফোন করেন। কোথাও পানীয় জল নেই, কোথাও রাস্তা ভাঙা, কোথাও আবার নিকাশিনালার মুখ বন্ধ। প্রায় প্রত্যেকেরই বক্তব্য, কাউন্সিলার কিছু করছেন না, আপনি দেখুন। পুরনিগমের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে তাঁর কর্মসূচিতে এমন কথা শোনেন। ফোনে অভিযোগ পেয়ে তিনি আধিকারিকদের সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিচ্ছেন।
টক টু মেয়রে যে কাজ হচ্ছে, তা মানছেন বিরোধীরাও। তবে, তাঁদের অভিযোগ, গৌতম দেব এই কর্মসূচির মাধ্যমে নিজের কৃতিত্ব জাহির করছেন। তিনি কোনও মেয়র পারিষদ, কোনও কাউন্সিলার বোঝেন না। নিজেকে পুরনিগমের এক এবং অদ্বিতীয় মনে করছেন। তাই কৃতিত্ব ভাগ হওয়ার আশঙ্কায় শাসক, বিরোধী কোনও কাউন্সিলারের দেওয়া উন্নয়নের কাজ, অভাব, অভিযোগের সমাধান করতে তৎপর নন। পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলার সুজয় ঘটকের অভিযোগ, ‘মেয়রের এখন একটাই কাজ। শনিবার করে টক টু মেয়র কর্মসূচিতে বসে এটা হয়নি, ওটা পাচ্ছি না এসব শোনা। অথচ আমরা প্রচুর উন্নয়নের কাজ, এলাকার সমস্যার কথা মেয়রকে জানিয়েছি। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। নোটিশ করেই হাত গুটিয়ে রয়েছে পুরনিগম। একটি বেআইনি নির্মাণও ভাঙা হয়নি। হয়তো টক টু মেয়রে ফোন করলে মেয়র ওই কাজটা করে দিতেন।’ সুজয়ের আক্ষেপ, ‘বর্তমান মেয়র কাউন্সিলারদের গুরুত্ব দেন না। তাই আর তাঁকে ইদানীং কোনও সমস্যার কথা জানাই না। গুরুত্ব না পেয়ে ইদানীং বোর্ডসভাতেও নিয়মিত যাই না।’ গৌতমের পালটা, ‘সুজয় তো বোর্ডসভাতেই আসেন না। তাহলে কাজ কীভাবে হবে?’
সিপিএম কাউন্সিলার মুন্সি নুরুল ইসলামের বক্তব্য, ‘আমরা বারবার বোর্ডসভায় বলেছি যে টক টু মেয়র ছাড়া আর কোনও কিছুকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য কাউন্সিলাররা বোর্ডসভায় তুলে ধরছেন। কিন্তু কাউন্সিলারদের বর্তমান বোর্ড গুরুত্ব দিচ্ছে না। বোর্ডসভাটা শুধু নিয়ম রক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৌতম দেবের নেতৃত্বাধীন বোর্ড কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেনি। তাই মানুষ বোর্ডের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই মেয়রকে ফোন করছেন।’ মেয়রকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধী দল বিজেপিও। বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন বলেন, ‘টক টু মেয়রেও কী খুব কাজ হচ্ছে? মেয়র নিজের মুখ দেখাতেই ব্যস্ত। বর্তমান পুর বোর্ড কাউন্সিলারদের কোনও গুরুত্ব দেয় না। একটা মেয়র পারিষদকেও মেয়র পাশে নিয়ে কথা বলেন না। উনি নিজেকে একাই ১০০ মনে করছেন। এটা চলতে পারে না।’