Siliguri | অভয়া কাঁদছে, সে বিচারহীন

Siliguri | অভয়া কাঁদছে, সে বিচারহীন

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শিলিগুড়ি: নারী সুরক্ষার প্রশ্নটি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দ্বারা অবহেলিত এবং অবদমিত। আমরা সমকালীন হচ্ছি, তবে আধুনিক হচ্ছি কই?

একবিংশ শতাব্দীর মাঝে দাঁড়িয়ে কৃষ্টি ও তথাকথিত প্রগতিশীলতা দিয়ে ঘেরা কলকাতা শহরের বুকে ঘটে গেল নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট, আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হল এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষিত, ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কলকাতা তথা গোটা বাংলায় প্রতিবাদ আন্দোলন চলেছে দীর্ঘদিন। চিকিৎসক সমাজ, মহিলাদের পাশাপাশি দেশের মানবিক মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। আওয়াজ উঠল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস!’

কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসলেন, ‘ফর হোয়াট?’ কেউ বললেন লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে, কেউ বললেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে, কেউবা আওয়াজ তুললেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত কাঠামো এবং নিরাপত্তার অভাবের বিরুদ্ধে, নারীদের ওপর নিরন্তর হিংস্রতার অবসান ঘটাতে সচেতনতার ডাক দিলেন অনেকে। নারীরা রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন। ১৪ এবং ১৫ অগাস্টের সন্ধিক্ষণে রাত দখলে নেমেছিলেন কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত জেলা, গ্রাম-শহরের মেয়েরা। ভারতবর্ষ দেখেছিল এক নতুন গণ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট। একটি তিন বছরের কন্যা মায়ের কোলে মিছিলে শামিল হয়ে স্লোগান দিয়েছিল, ‘আমরা নারী নির্যাতনের বিচার চাই’। পুরুষরা দিয়েছিলেন নীরব অথচ দৃঢ় সমর্থন।

এরপর সাধারণ মানুষ-ডাক্তার-অধ্যাপক-সমাজকর্মীদের লাগাতার মিছিল, লালবাজারে অবস্থান, এত মানুষের চোখের জল, ক্ষোভ… অথচ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে অভয়া কাঁদছে, সে বিচারহীন। বিচারহীনতার এক বছর। কতটা ব্যর্থ আমরা? একজন প্রখ্যাত সাংবাদিকের একটি কথা মনে পড়ে যায়, যুদ্ধ কেবল জয়ের জন্যই লড়া হয় না, মানুষ লড়ছে- এটা জানানোও প্রয়োজন।

সংহতি ও প্রতিবাদের ভাষা কেবল একটি মায়ের সন্তানের জন্য নয়, রাজ্য এবং দেশে ঘটে চলা সমস্ত অসাম্যের বিরুদ্ধে একটি আওয়াজ। নিপীড়ক যত মারবে, লড়াই ততই বাড়বে। নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদার লড়াই। লিঙ্গের ভিত্তিতে শোষক এবং শোষিত দ্বিবিভাজন যে সমাজে রয়েছে, প্রতিবাদ সেখানে হয়ে ওঠে রাজনৈতিক। এই রাজনীতি কোনও নির্দিষ্ট দলের পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক ক্রিয়া না হলেও ভীষণভাবে লিঙ্গ-রাজনৈতিক একটি লড়াই। মিছিলে অনেকসময় অনেকেই বলেছিলেন, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি জড়াবেন না। কোথাও গিয়ে এই অরাজনৈতিক নিরপেক্ষ প্রতিবাদ, বিচারকে স্থগিত করল কী? প্রশ্ন থেকে যায়। যে কোনও প্রতিবাদ মানেই কিন্তু আসলে পক্ষ নেওয়া। রাষ্ট্র যেখানে উদাসীন, সেখানে মানুষকে ন্যায়ের পক্ষ তো বেছে নিতেই হবে।
অভয়ার আর্তি, আসলে দেশের প্রতিটি মেয়ের ব্যথার সুর। একটি বড় ঘটনা সামনে এলে আমরা নড়েচড়ে উঠি, অথচ গ্রামাঞ্চলের রাবেয়া থেকে শহরের ছোট্ট মেয়েটি, আরজি করের ডাক্তার থেকে লোকাল ট্রেনে সন্ধ্যার পথে বাড়ি ফেরা ক্লান্ত নারীর চোখের জল জানে তারা সুরক্ষিত নয়। হ্যাঁ, সমাজকে শোষণমুক্ত করতে আমরা খানিকটা ব্যর্থ। মানুষ নীতি ব্যবস্থা, আইনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ। তবুও সমাজের ওপর আস্থা হারানো পাপ। রাষ্ট্র যত শোষণযন্ত্র হয়ে উঠবে, নারীরা তত হয়ে উঠুক দ্রোহী। হয়তো একটু বড় ভাবনার সময় এসেছে, সময় এসেছে একটি ছোট ঘটনা থেকে পুরো সমাজের মনন, সমাজে নারীর অবস্থান এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *