রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: খাবারের মান যাচাইয়ে শিলিগুড়ি শহরে (Siliguri) হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলিতে অভিযান শুরু করেছিল পুরনিগম। কিন্তু মাঝপথে সেই অভিযান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। পুরনিগম সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দপ্তরের খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকরা জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পরীক্ষায় ব্যস্ত রয়েছেন। তাঁরা সময় দিতে না পারায় অভিযান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেছেন, ‘এটা এখন পুরোপুরি স্বাস্থ্য দপ্তর দেখছে। ওই দপ্তর যেভাবে বলে সেই মতো আমাদের স্যানিটারি ইনস্পেকটররা অভিযানে শামিল হন। অভিযানের বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরই বলতে পারবে।’ দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ তুলসী প্রামাণিক অবশ্য বলছেন, ‘জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পরীক্ষার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকরা খাবারের মান যাচাইয়ে হোটেল, রেস্তোরাঁ অভিযানে নামতেই পারেন। অভিযান কেন হচ্ছে না, খোঁজ নেব।’
শিলিগুড়িতে রাতারাতি গজিয়ে উঠছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিরিয়ানি ও মিষ্টির দোকান। কিন্তু এগুলির সিংহভাগ কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলে অভিযোগ। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দোকান এবং হোটেলের খাবার, বিশেষ করে বিরিয়ানিতে পোকা পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে আবার দু’তিনদিন বা তারও বেশি দিন রেফ্রিজারেটারে রাখা খাবার গরম করে বিক্রি করছেন। প্রশ্ন রয়েছে খাবারে ব্যবহৃত তেল, মশলা সহ বিভিন্ন উপকরণের মান নিয়েও।
শহরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে দু’মাস আগে অভিযান শুরু হয়েছিল। স্বাস্থ্য দপ্তর, পুরনিগম, পুলিশের যৌথ টিম যে যে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিরিয়ানির দোকানে গিয়েছে সেখানেই অনিয়ম ধরা পড়েছে। অনেককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আবার দু’একটি ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়।
পুরনিগমের তরফে জানানো হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার করে শহরে এই অভিযান হবে। এর জেরে বহু ব্যবসায়ী সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে অভিযান আদৌ কতদিন জারি থাকবে, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। বাস্তবে হলও তাই। বেশ কিছুদিন ধরে শহরে অভিযান বন্ধ। এমনকি যে সমস্ত হোটেল, রেস্তোরাঁয় অভিযান হয়েছিল সেগুলিও বহাল তবিয়তে চলছে। কেন এমন হল সেই প্রশ্ন উঠছে।
পুরনিগম জানিয়েছে, মাঝে খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্য সরকার দিঘার জগন্নাথধামের প্রসাদ বিলি করেছে। সেই প্রসাদ পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ফুড সেফটি অফিসার বা খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকদের নিয়োগ করা হয়েছিল। ফলে তাঁরা শহরের হোটেল, রেস্তোরাঁয় অভিযানে আসতে পারেননি। পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন বলেছেন, ‘পুরনিগমের কাজই এমন। ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা করে অভিযান শুরু হয়, দু’তিন সপ্তাহ পরেই সেটা বন্ধ হয়ে যায়।’ জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিলিতে খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকদের ব্যস্ত থাকা প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘কী সুরক্ষা দেখছেন ওই আধিকারিকরা। জগন্নাথ দেবের প্রসাদের নাম করে যে মিষ্টি বিলি করা হচ্ছে সেখানেও তো পোকা পাওয়া গিয়েছে।’