রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েই রাজ্য স্তরের পদ পেলেন শংকর মালাকার (Sankar Malakar)। সোমবার তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে শংকরকে সহ সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। ফলে শংকর দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতির (সমতল) পদ পেতে পারেন বলে যে জল্পনা চলছিল সেটার অবসান হল। অন্যদিকে, শংকর দলে এসেই গুরুত্ব পেয়ে যাওয়ায় শিলিগুড়িতে তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে (TMC)। তিনি নিজে এবং এক শিক্ষক নেতাকে দিয়ে বিভিন্নভাবে শংকরকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য দলের নেতা-নেত্রী, পুরনিগমের কাউন্সিলার সহ জনপ্রতিনিধিদের বার্তা দিচ্ছেন। দলবদলের পর থেকে তিনি নিজেও এখনও শংকরের মুখোমুখি হননি। এনিয়ে দলের অন্দরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
গত শনিবার শিলিগুড়িতে তৃণমূল কার্যালয়ে শংকরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনেক নেতা-নেত্রীর গরহাজিরার পিছনে শহরের এক নেতার লবির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। শংকরকে কোণঠাসা করতে কলকাঠি নাড়তে শুরু করেছেন ওই নেতা। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার বিদায়ি সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষের বক্তব্য, ‘সংবর্ধনা সভায় সবাইকে ডাকা হয়েছিল। অনেকেই এসেছিলেন, কেউ কেউ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি। এনিয়ে দলের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।’
গত বুধবার কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা শংকর মালাকার। রাজনীতির ময়দানে যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে এতদিন কাজ করেছেন তিনি। শুধু শিলিগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতেও রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। এহেন শংকর এবার তৃণমূলে চলে আসায় শিলিগুড়িতে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে থাকা এক নেতা ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন।
তৃণমূলের অন্দরে এনিয়ে যথেষ্ট গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, এতদিনই তিনিই শুধু শিলিগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের শেষকথা ছিলেন। কিন্তু এবার শংকরকেও দল গুরুত্ব দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সোমবার শংকরকে রাজ্য সহ সভাপতির পদে বসানোর সিদ্ধান্ত সেটারই প্রমাণ। ফলে আগামীতে শংকর উত্তরবঙ্গে মমতার বিকল্প তাস হয়ে উঠতে চলেছেন। শংকর বলেছেন, ‘দলনেত্রী আমাকে যখন যে দায়িত্ব দেবেন তা পালন করার চেষ্টা করব।’
এটা বুঝেই তৃণমূলের ওই বড় নেতা শংকরকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বার্তা দিচ্ছেন। শহর থেকে গ্রামে দলের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি থেকে নেতা-নেত্রী সকলকেই ‘শংকরকে নিয়ে এত মাতামাতি করার কিছু নেই’ বলে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার দলের তরফে পার্টি অফিসে শংকরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সেই সংবর্ধনা সভাতেও যাতে কেউ না যান সেইজন্য পুরনিগমে দলের কাউন্সিলার থেকে শুরু করে মহকুমার গ্রামাঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, নেতা-নেত্রীদের ফোন করে বলা হয়েছে। ওই নেতার হয়ে এক শিক্ষক নেতা সামনে থেকে এই কাজগুলি করছেন বলে অভিযোগ। এই কারণেই শনিবারের সংবর্ধনা সভায় তৃণমূলের সিংহভাগ কাউন্সিলারই পার্টি অফিসে যাননি।
গত মাসেই তৃণমূল শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা বাদে বাকি জেলায় নতুন জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা করেছে। শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতির নাম পরবর্তীতে ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়েছে। তার পরেই শংকর মালাকার দলে যোগ দিয়েছেন। শংকরকে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভায় প্রার্থী করতেই তৃণমূল দলে নিয়েছে, এটা একরকম নিশ্চিত। পাশাপাশি শংকরকে জেলা সভাপতির পদে বসানো হতে পারে বলেও অনেকের ধারণা ছিল। কিন্তু শংকরকে রাজ্য সহ সভাপতির পদ দেওয়ায় জেলা সভাপতি হওয়া নিয়ে জল্পনায় জল পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।