উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বিলাসবহুল ঘড়ি নির্মাতা সংস্থা রোলেক্সের প্রতিষ্ঠাতা হ্যানস উইলডসর্ফকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একজন নাৎসি গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল। সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ ন্যাশনাল আর্কাইভসের গোপন নথি উদ্ধৃত করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনা হয়েছে। ওই নথিগুলোর সূত্রে জানা যায়, উইলডসর্ফকে ব্ল্যাকলিস্ট করার জন্য ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এম১৫ (MI5) সুপারিশ করেছিল।
এম১৫ (MI5)-এর ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সালের মধ্যেকার নথি, যা ‘বক্স ৫০০’ (Field 500) নামে পরিচিত, তাতে উইলডসর্ফকে সবচেয়ে আপত্তিকর (most objectionable) এবং গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহভাজন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও, এম১৫ তাকে মিত্রশক্তির জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখত। ১৯৪৩ সালের একটি প্রতিবেদনে বিশেষভাবে বলা হয়, “উইলডসর্ফ এবং তার স্ত্রী কোম্পানির সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারের মালিক এবং তাকে শত্রুদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে দেখা হয়।”
১৯৪১ সালের আরেকটি নথিতে জানা যায়, উইলডসর্ফকে ব্ল্যাকলিস্ট করার কথা বিবেচনা করা হলেও, তা কার্যকর করা হয়নি। এর কারণ ছিল, এম১৫ মনে করেছিল যে, এই পদক্ষেপ রোলেক্সের সুনাম এবং তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দেশগুলোর সঙ্গে থাকা বিশাল বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষতি করতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দিদের (POWs) বিনামূল্যে রোলেক্স ঘড়ি দেওয়ার উইলডসর্ফের প্রস্তাবটি দেশপ্রেমের বদলে প্রচারের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল। ঘড়ি বিষয়ক ইতিহাসবিদ জোসে পেরেজ, যিনি এম১৫-এর এই ফাইলটি আবিষ্কার করেন, তিনি জানান, “রোলেক্স মিত্রশক্তির যুদ্ধবন্দিদের ঘড়ি দিয়েছে, এই ঘটনা উইলডসর্ফ-এর ইতিহাসের সঠিক দিকে থাকার কথাই নির্দেশ করে। কিন্তু আমি মনে করি, এটি ব্রিটিশ সরকারের সুনজরে আসার একটি কৌশল ছিল।” তিনি আরও বলেন, ‘১৯৪১ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে সুইস ঘড়ির আমদানি নিষিদ্ধ ছিল, তাই এটি ছিল “এক ঢিলে দুই পাখি মারার” মতো। একদিকে ব্রিটিশদের সমর্থন লাভ এবং অপরদিকে যুদ্ধের পরে ঘড়ির দাম আদায় করা।’
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোলেক্স জানিয়েছে যে, তারা এই ফাইলটি সম্পর্কে সচেতন এবং এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি স্বাধীন দল গঠন করেছে তাঁরা। এই প্রসঙ্গে কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেন, “এই অভিযোগগুলোর সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে, আমরা একটি স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক দল গঠন করেছি, যারা এই সময়ে হ্যানস উইলডসর্ফের সঠিক ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন।”
প্রসঙ্গত, ১৮৮১ সালে জার্মানিতে জন্ম নেওয়া উইলডসর্ফ ১৯০৩ সালে ইংল্যান্ডে আসেন। ১৯১৯ সালে তিনি রোলেক্সের সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্থানান্তরিত করেন। ১৯৬০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, রোলেক্সের মালিকানা তাঁর প্রতিষ্ঠিত হ্যানস উইলডসর্ফ ফাউন্ডেশনের হাতে আসে, যারা আজও কোম্পানিটি পরিচালনা করছে।