বিশ্বজিৎ সরকার, করণদিঘি: তেরো বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের (Rape Case) অভিযোগ। ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে নির্যাতিতা। পাঁচ মাস পর থানায় অভিযোগ দায়ের হল। অভিযুক্ত তরুণের নাম হৃদয় সিংহ। তাঁর বাড়ি ওই নাবালিকার গ্রামেই। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। খোঁজ চলছে। এদিকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় নির্যাতিতাকে সোমবার পুলিশি পাহারায় রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (Raiganj Medical Faculty & Hospital) স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়। করণদিঘি থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
চলতি বছর ১১ এপ্রিল বাড়ির পাশের মাঠে ওই নাবালিকা শৌচকর্ম করতে গেলে তাকে টেনেহিঁচড়ে ভুট্টাখেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত। এরপর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে বাড়ি ফিরছে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন মা। পরিবারের সদস্যরা খুঁজতে মাঠে যান। সেখানে তাঁরা নাবালিকার ওড়না ও জুতো আবিষ্কার করেন। কিছুটা এগোতেই শুনতে পান কান্নার আওয়াজ। অবশেষে ভুট্টাখেত থেকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় নির্যাতিতাকে উদ্ধার করা হয়।
নাবালিকাকে বাড়িতে নিয়ে এসে পরিবারের সদস্যরা ঘটনা জানতে চাইলে সে সবকিছু গুছিয়ে বলতেও পারেনি। তবে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় একথা বলেছিল। কিন্তু তারপর কী ঘটেছিল তা তার মনে ছিল না। এরপর এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নাবালিকাকে নিয়ে যাওয়া হলে যৌন নিগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ঘটনার দু’দিন পর গ্রামের সালিশি সভায় অভিযুক্ত তরুণকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা ও একাধিক শর্তও ধার্য করা হয়। কিন্তু হৃদয় এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত। টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, তিনি একটি শর্তও পূরণ করেননি বলে অভিযোগ।
ঘটনার পাঁচ মাস পর রবিবার রাত থেকে হঠাৎই ওই নাবালিকার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। বারবার বমি হচ্ছিল। সঙ্গে পেটে তীব্র যন্ত্রণা। তড়িঘড়ি তাকে পরিবারের সদস্যরা করণদিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষানিরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা। এরপর থানায় অভিযোগ জানানো হলে নাবালিকাকে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ একাধিক পরীক্ষার পর স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক জানান, নাবালিকা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে নাবালিকার মা বলেন, ‘আমার মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিবেশী এক তরুণ ওকে ধর্ষণ করেছিল। মেয়েকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসি। মেয়ে সব কথা বলতে পারেনি। তাই আমরা গ্রামীণ চিকিৎসককে দেখিয়ে ওকে সুস্থ করে তুলি। বুঝতে পারিনি মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়বে। আমরা অভিযুক্তর শাস্তির দাবি জানাই।’ শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারাও।