উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজস্থান পুলিশ অ্যাকাডেমি (RPA)-তে প্রায় ২ বছর ধরে নিজেকে একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রশিক্ষণ সেশনে অংশ নেওয়া, অফিসিয়াল পোশাক পরা এবং এমনকি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলার অভিযোগে এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোনা বুগালিয়া ওরফে মূলি নামের এই অভিযুক্ত মহিলাকে চলতি সপ্তাহে রাজস্থানের সিকার জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে জয়পুরে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে সে পলাতক ছিল।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বুগালিয়া সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও রাজ্যের এই শীর্ষ পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছিল। গ্রেপ্তারের পর, পুলিশ বুগালিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৭ লক্ষ টাকা নগদ, তিনটি আলাদা পুলিশ ইউনিফর্ম এবং রাজস্থান পুলিশ অ্যাকাডেমির পরীক্ষার কাগজপত্র উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুগালিয়া রাজস্থানের নাগৌর জেলার ‘নিমবা কে বাস’ গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা একজন ট্রাক ড্রাইভার। অফিসিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী, সে ২০২১ সালের রাজস্থান সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। ২০২১ সালে ব্যর্থ হওয়ার পর, সে “মুলি দেবী” নামে জাল নথি তৈরি করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা ছড়িয়ে দেয় যে, সে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তীতে, সে সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য তৈরি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দেয় এবং স্পোর্টস কোটার মাধ্যমে ভর্তি হওয়া পূর্ববর্তী ব্যাচের একজন প্রার্থী সেজে রাজস্থান পুলিশ অ্যাকাডেমিতে ঢোকে। প্রায় ২ বছর ধরে, বুগালিয়াকে নিয়মিতভাবে আরপিএ-র প্যারেড গ্রাউন্ডে পূর্ণ ইউনিফর্মে দেখা যেত বলে জানা গিয়েছে। সে আউটডোর ড্রিলগুলিতে অংশ নিত, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলত এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুপ্রেরণামূলক বিষয়বস্তু নিয়ে রিল পোস্ট করত। আর এই সব কিছু সে করত একজন কর্মরত অফিসার সেজে। এমনকি, সে পূর্ণ পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় একটি পাবলিক মঞ্চ থেকে কর্মজীবন সচেতনতা নিয়ে বক্তৃতাও দিয়েছিল।সেই সংক্রান্ত একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সে আইপিএস অফিসার সহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তরুণ প্রার্থীদের অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ দিচ্ছে।এরপরেই কিছু প্রশিক্ষণার্থী সাব-ইন্সপেক্টর তার পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পর বুগালিয়ার প্রতারণা ফাঁস হতে শুরু করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয় এবং একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, বুগালিয়া স্বীকার করে যে সে তাঁর পরিচয় জাল করেছে।
এই আজব ঘটনাটিকে ‘ব্যবস্থাগত পচনের লক্ষণ’ হিসাবে অভিহিত করে সমাজকর্মী বিজয় কুম্ভর বলেন, “মোনা বুগালিয়া ২০২১ সালের পুলিশ পরীক্ষায় ফেল করেছিল। তাই সে তার নাম পরিবর্তন করে, নথি জাল করে এবং ‘মুলি দেবী’ সেজে জয়পুর পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রবেশ করে। দুই বছর ধরে সে প্রশিক্ষণ নেয়, আইপিএস অফিসারদের সঙ্গে রিল বানায়, এডিজিদের সঙ্গে টেনিস খেলে এবং চাঁদাবাজি করে। কেউ খেয়াল করেনি যে সে আসলও ছিল না। এতদিনে গ্রেপ্তার হয়েছে। কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক নেই। কোনও যাচাইকরণ নেই। কিছুই নেই।” এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “আপনি সারা বিশ্বকে যাচাই করেন, কিন্তু আপনার নিজের নিয়োগপ্রাপ্তদের না? এটি কেবল একটি ত্রুটি নয়। এটি প্রাতিষ্ঠানিক পচন।” এই বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।