রায়গঞ্জ: বাঁশের তৈরি মাচায় শুয়ে রয়েছে ‘মরদেহ’। পুরো দেহ সাদা কাপড়ে ঢেকে দড়ি দিয়ে বাঁধা। পায়ের তলায় আলতা মাখানো। পুরো ‘মৃতদেহ’ ফুল দিয়ে সাজানো। বন্ধ চোখের উপর তুলসি পাতা।
হঠাৎ করে মরা নড়ে উঠলো। এই বাক্যটি পড়ে একঝলকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লালুর গল্পের কথা মনে হতেই পারে। সেই গল্পে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে লালু আশ্রয় নিয়েছিল মৃতদেহ ঢাকা চাদরের ভিতরে। কিন্তু এখানে যিনি মৃতদেহ হিসেবে রয়েছেন তিনি আসলে জ্যান্ত একজন মানুষ তথা চড়ক সন্ন্যাসী। শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার পালন করতেই মৃতদেহের বেশ নিয়েছেন তিনি। বাকি সন্ন্যাসীদের মধ্যে একজন তার বউ সেজেছেন।
বৃহস্পতিবার ছিল বৈশাখী চড়ক। রায়গঞ্জের বন্দর শ্মশান সংলগ্ন কুলিক নদীর তীরে সেই চড়ক অনুষ্ঠিত হয়। চড়ক আসবে আবার এক বছর পর। কিন্তু এই এক বছরের মধ্যে যদি কোনও গাজন বা চড়ক সন্ন্যাসী দেহ রাখেন তাহলে আগামী সাত বছর তাঁদের চড়ক থেকে বিরত থাকতে হবে। সেজন্যই এই বিশেষ আচার বলে জানা গেছে।
কি হয় এই আচারে? উপস্থিত সন্ন্যাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যাকে মৃতদেহ বানানো হয়েছে তার মৃতদেহ নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সন্ন্যাসীরা এদিন ঘুরেছেন। তারপর কুলিক নদীর কাছে মৃতদেহকে সমর্পণ করা হয়। কুলিককে ‘গঙ্গা’ মনে করে সেই মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানানোর পর তথাকথিত মৃতদেহটি নদী থেকে ডাঙায় উঠে আসে। এরপর সেই মৃতদেহকে কাদামাটি মাখিয়ে কাদা খেলার পর মৎসমুখীর মধ্যে দিয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
তবে সবথেকে বড় বিষয় হল এদিনের এই ‘জলচড়কে’ হিন্দুদের পাশাপাশি অহিন্দুরাও শামিল হন। এদিন চড়ক পুজো কমিটির অন্যতম সন্ন্যাসী ত্রিদিব সাহা বলেন, “এগুলো আমাদের ধর্মীয় রীতি। অতীতে স্বর্গীয় অনিল গিরি যখন এখানে থাকতেন তিনি এই আচারগুলো শিখিয়ে গিয়েছিলেন। সেই প্রথা মেনে আজও চলছে এই রীতি। হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিম, খ্রীষ্টান, জৈন সহ মোট বারোটি ধর্মের কমপক্ষে একজন করে হলেও এখানে শামিল হন।”