বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: পারিবারিক অশান্তির জেরে স্ত্রীর পেটে লাথি মেরে কন্যা ভ্রূণহত্যার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার (Raiganj) রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডারখোর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে পলাতক মূল অভিযুক্ত আলতাব হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে রায়গঞ্জের বাহিন গ্রামের বাসিন্দা সাইনা খাতুনের বিয়ে হয় ডারখোর গ্রামে পেশায় রাজমিস্ত্রি আলতাব হোসেনের সঙ্গে। অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে আলতাব মদ ও জুয়া খেলায় আসক্ত হয়েছিল। তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি লেগেই ছিল। স্ত্রী প্রতিবাদ করলেই জুটত মার ও অকথ্য নির্যাতন। সাইনার বাপের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, স্ত্রীর জমানো টাকা চুরি করে জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় আলতাব। তার প্রতিবাদ করতেই নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারে আলতাব। স্ত্রীকে বাঁশ দিয়েও পেটানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে ওই বধূকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বুঝতে পারেন, গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই তড়িঘড়ি অপারেশন করার নির্দেশ দেন ওই কর্তব্যরত চিকিৎসক। মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ অপারেশন করে মৃত কন্যাশিশুটি বের করা হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সাইনা বর্তমানে রায়গঞ্জ মেডিকেলের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গতকাল রাতেই সাইনার বাপের বাড়ির তরফে তাঁর স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির চারজনের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নির্যাতিতা বধূর দাদা সাইরুল শেখ বলেন, ‘আমার বোনের ওপর দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত মদ ও জুয়ায় আসক্ত বোনজামাই। বোন অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দিনমজুরি করে কিছু টাকা জমিয়েছিল। বোনজামাই সেই টাকা চুরি করে জুয়ায় হেরে যাওয়ায় প্রতিবাদ করেছিল বোন। তাতেই বোনকে বাঁশপেটা করার পাশাপাশি তলপেটে লাথি মেরে গর্ভস্থ শিশুটাকে মেরে ফেলল। আমরা অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
সাইরুল জানান, বোনের স্বামী আলতাব হোসেন সহ তার শ্বশুর পাতালু শেখ, শাশুড়ি সালিয়া খাতুন ও দেওর সাহিল শেখের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের ৮৫/৯০ ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এদিন সাইনার শ্বশুর সত্তরোর্ধ্ব পাতালু শেখকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলে পুলিশ। রায়গঞ্জ সিজেএম কোর্টের সরকারি আইনজীবী নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘ধৃতের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও ভ্রূণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। যদিও ধৃত ব্যক্তি বয়স্ক হওয়ায় বিচারক শর্ত সাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত আলতাব হোসেন সহ বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। মৃত শিশুকন্যাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পর এদিন তাকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে কবরস্থ করা হয়।