রায়গঞ্জ: সুপারভাইজারের অভাবে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে পারছেন না গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে এমন প্রায় ১৫ জন গবেষক কোর্স ওয়ার্ক শেষ করে সুপারভাইজারের আশায় বসে রয়েছেন। সুপারভাইজার না মেলায় পিএইচডি কোর্সে তাঁদের রেজিস্ট্রেশনও হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে আটকে রয়েছে গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় এক গবেষক শেষপর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
ইটাহার ব্লকের ডামডোলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোস্তাক আলম ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে পিএইচডির কোর্স ওয়ার্ক করার জন্য ভর্তি হন। ২০১৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে কোর্স ওয়ার্ক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মোস্তাককে কোনও সুপারভাইজার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আবদুল মোস্তাকের অভিযোগ, ‘উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও বিভাগীয় প্রধানকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি। একবছর পর দর্শন বিভাগে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করলে সেটিও ফেলে রাখা হয়। তাই বাধ্য হয়েই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অপর এক গবেষক মালদার বাসিন্দা আলো রায় আবার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন পিএইচডি করার জন্য। ভর্তির পর তিনি কোর্স ওয়ার্ক শেষ করে সুপারভাইজারের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তিনিও এখনও পর্যন্ত কোনও সুপারভাইজার পাননি। আলোর কথায়, ‘অনেক আবেদন নিবেদন করেও সুপারভাইজার মিলছে না। ফলে এখনও আমার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। আমার কী অপরাধ, জানি না। কীভাবে পিএইচডি শেষ করব বুঝতে পারছি না। উচ্চশিক্ষা অর্জনে এভাবে বাধার মুখে পড়তে হবে ভাবিনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রশান্ত মাহালা বলেন, ‘মোস্তাক আলম পিএইচডিতে ভর্তির সময় শর্ত ছিল, তিনি সংস্কৃত ডিপার্টমেন্টে কোর্সওয়ার্ক করবেন এবং দর্শন বিভাগের সুপারভাইজারের অধীনে গবেষণা করবেন। কিন্তু এরপর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।’
মোস্তাকের বিষয়ে আবার ভিন্ন সুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সিদ্দিক আলম বেগের। তাঁর কথায়, ‘মোস্তাক সংস্কৃত বিভাগের গবেষক হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু বিষয়টির দর্শনের সঙ্গে মিল রয়েছে, তাই আমি তাঁর সুপারভাইজার হতে রাজি ছিলাম। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের পিএইচডি কমিটি থেকে ছাড়পত্র না মেলায় তা সম্ভব হয়নি।’
যদিও পিএইচডি গবেষকদের সুপারভাইজার পাওয়া নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১৫ জন আছেন যাঁরা কোর্স ওয়ার্কের পর সুপারভাইজার পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের রেজিস্ট্রেশনও হচ্ছে না। আসলে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক না থাকার কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে।’