দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: রথযাত্রার (Ratha Yatra) দিন কাঠামোপুজো বা খুঁটিপুজোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজোর (Durga Puja) প্রতিমা তৈরির কাজ। যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। কিন্তু এবছর রায়গঞ্জের (Raiganj) কুমোরটুলিতে ধরা পড়ছে ভিন্ন ছবি। ইতিমধ্যে বড় মাপের মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা গড়ার কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ করে ফেলেছেন। আবার অনেকে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে প্রতিমা তৈরি করছেন জোরকদমে।
এই তোড়জোড়ের কারণ কী? শিল্পীদের কথায়, সাধারণত রথের দিন প্রতিমা তৈরির জন্য ব্যবহৃত কাঠামোটি পুজো করা হয়। তারপর থেকে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। কিন্তু এবছর পুজো অনেকটা আগে। তাই এখন থেকে কাজ শুরু না করলে সময়ের মধ্যে সব প্রতিমা তৈরি করা যাবে না।
আপামর বাঙালির কাছে জগন্নাথ দেবের রথের রশিতে টান মানেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়া। রথযাত্রায় ঢাকের বাদ্যি যেন জানান দেয় মা আসছেন। সেদিন থেকে শুরু হয় ঘরের মেয়েকে ঘরে আনার প্রস্তুতি। কিছু জায়গায় রথযাত্রার দিনটিকে কাঠামোপুজো বা খুঁটিপুজোর দিন হিসেবে মানা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা।
অবশ্য শহরের কুমোরটুলিতে শিল্পী নারায়ণ পালের কারখানায় গেলে মনে হবে দুর্গাপুজো যেন দোরগোড়ায়। ইতিমধ্যে সেখানে ১২টি প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। বিশ্বকর্মার মূর্তিও তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভাদ্র মাসে হওয়া মনসাপুজোর জন্য কাঠামো তৈরি করে রেখেছেন তিনি।
শিল্পী নারায়ণ বলেন, ‘প্রাচীন রীতি মেনে আজও রথের দিন থেকে প্রতিমার কাঠামোতে মাটি দেওয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু এবছর পুজো এগিয়ে আসায় বড় বড় ক্লাবগুলির প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। আরও বেশকিছু ক্লাব প্রতিমা গড়ার অর্ডার দিয়ে গিয়েছে।’ একই ছবি দেখা গেল মৃৎশিল্পী হরিপদ পালের কারখানাতে।
কুমোরটুলিতে প্রায় ২৫ জন শিল্পী প্রতিবছর দুর্গা সহ অন্যান্য প্রতিমা গড়ার কাজ করেন। বাকি কয়েকজন শিল্পী বিহার বা অন্যত্র গিয়ে কাজ করেন। প্রবীণ শিল্পী ভানু পালের কথায়, ‘পুরাণ মতে রথের দিন কাঠামোতে মাটি দিয়ে দুর্গাকে আহ্বান জানানো হয়। তারপর পুজোর অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু হয়। রথের জন্য আমরা সারাবছর অপেক্ষা করি। এই দিন কাঠামোতে গঙ্গা মাটির লেপন দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কোনও বছর এত আগের থেকে কাজ শুরু করা হয় না।’ তাঁর মতে, ক্লাবগুলির পুজোর প্রতিমা আগে তৈরি করা হয়ে গেলে পরবর্তীতে বাড়ির পুজোর জন্য সময়ের মধ্যে প্রতিমা তৈরি করা নিয়ে চিন্তা থাকে না।