বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: কথায় বলে, ‘ভুল স্বীকার করে নিলে শাস্তির ভাগ অনেকটাই কমে যায়।’ এমন ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখল রায়গঞ্জ জেলা আদালত। নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়ায় শাস্তির মেয়াদ কমল বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী এক বৃদ্ধার।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে ভিড় করতে দেখা গিয়েছিল বহু মানুষকে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই চেষ্টা করছিলেন নিজের দেশ ছাড়তে। তাঁদের মধ্যেই ৮৫ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়া আধো বর্মন প্রাণ ভয়ে এদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর সীমান্তে ওই প্রৌঢ়াকে আটক করে বিএসএফ থানার পুলিশ। বৃদ্ধার বাড়ি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার পিরগঞ্জ এলাকায়। তারপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ১২ ডিসেম্বর রায়গঞ্জ জেলা আদালতে পেশ করে। এই ঘটনায় মাত্র ৪১ দিনের মধ্যে সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে সাজা ঘোষণা করেন বিচারক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী।
রায়গঞ্জ জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘ওই বৃদ্ধা মহিলা এদেশে চলে আসায় তাঁর নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়। যার সর্বনিম্ন শাস্তি ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। কিন্তু ওই বৃদ্ধা তাঁর দোষ স্বীকার করে বিচারকের কাছে একটি আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তাঁর বিশেষ ক্ষমতায় ২ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশপাশি ৪ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেছেন। অনাদায়ে আরও ১ মাস সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।’ বৃহস্পতিবার তাঁকে বালুরঘাট জেলা সংশোধনাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়
আপাতত ওই অশীতিপর বন্দির ঠিকানা বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার হলেও তারপরই তাঁকে পুশব্যাকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জেল সূত্রে খবর।
রায়ে খুশি হয়ে বৃদ্ধার আইনজীবী জয়ন্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আধো বর্মন তাঁর দোষ স্বীকার করেছেন। এছাড়া কোনও বেআইনি কাজকর্ম কিংবা বেআইনি জিনিস তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বিচারক ওঁর বয়সজনিত সমস্যা এবং সেইসময় প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি বিচার করে মাত্র ২ মাসের সাজা দিয়েছেন।’ রায়গঞ্জ আদালতের এধরনের সাজা ঘোষণাকে ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন অনেকেই।