বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: মাদক কারবারিদের হাতে আক্রান্ত পাঁচ ব্যক্তি। মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করায় এই ‘শাস্তি’ পেয়েছেন তাঁরা। সোমবার ঘটনাটি ঘটে রায়গঞ্জ (Raiganj) শহর সংলগ্ন মারাইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভিটি কাটিহার গ্রামে। জখম পাঁচজনকে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (Raiganj Authorities Medical Faculty and Hospital) সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এখনও পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই চিকিৎসাধীন। রায়গঞ্জ থানায় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্তরা। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান রায়গঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ভিটি কাটিহার গ্রামে একটি পরিবার রমরমিয়ে মাদকের কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই কারবারের সঙ্গে যুক্ত বিষ্ণু সরকার, ফুলকুমার সরকার, রাজকুমার সরকার, প্রণব সরকার নামে চার ব্যক্তি। সোমবার কয়েকজন নাবালক ব্রাউন সুগার কিনতে যায় বিষ্ণুর বাড়িতে। কিনে বেরোতেই তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন প্রতিবেশীরা।
এরপরই ঝামেলার সূত্রপাত। বিষ্ণুর নেতৃত্বে বাকি অভিযুক্তরা প্রতিবাদকারীদের ওপর রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পাঁচজন। আক্রান্তদের নাম তাপস সরকার, অভিজিৎ সরকার, পবিত্র সরকার, বিকাশ সরকার ও অর্চনা সরকার। এঁদের মধ্যে পবিত্রর মাথায় ১২টি সেলাই পড়েছে। বাকিরাও গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন।
জখমদের মধ্যে তাপস বলেন, ‘ব্রাউন সুগারে আসক্ত নাবালক ও তরুণরা নেশার টাকা জোগাড়ে অপরাধমূলক কাজ করে চলেছে। এদিন একদল নাবালক ৫০০ ও ৩০০ টাকা দিয়ে মাদক কিনছিল। আমরা তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলি। এরপর আমাদের ওপরে চড়াও হয় ওই মাদক ব্যবসায়ীরা। আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
শুধু ভিটি কাটিহার গ্রামে নয়, গোটা মারাইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় জনা পনেরো ব্যক্তি ব্রাউন সুগার বিক্রি করে। মাদক আবার বিভিন্ন কোড ওয়ার্ডে বিক্রি হয়। যেমন, টোটা, পুরিয়া, সফেদ, চকোলেট ইত্যাদি। আর মাদকের ক্রেতারা বেশিরভাগই নাবালক ও অল্পবয়সি তরুণ।
অভিযোগ, মাদক বিক্রির কারণে ভিটি কাটিহার গ্রামে চুরি-ছিনতাই বেড়ে গিয়েছে। চলতি মাসে তিনটি চুরি হয়েছে। একটি বাড়িতে তালা ভেঙে ঘরের আলমারি থেকে নগদ ও গয়না চুরি যায়। রাতে ওই এলাকায় টোটোচালকরা গেলে তাঁদের থেকে টাকাপয়সা ছিনতাই করে চম্পট দিচ্ছে নেশাগ্রস্তরা। চাষের জমি থেকে পাম্প চুরি হচ্ছে। রায়গঞ্জ স্টেশন থেকে রেলের যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে।
গ্রামবাসীর বক্তব্য, বারবার বারণ করা সত্ত্বেও অভিযুক্তরা মাদকের কারবার বন্ধ করতে চাননি। ওই পরিবারটি এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত। যে কারণে অনেকেই আর বেশি জোরাজুরি করতে সাহস পাননি। সম্প্রতি শক্তিনগর এলাকায় এরকমই দুই মাদক কারবারিকে এলাকার বাসিন্দারা পুলিশের হাতে তুলে দেন। কিন্তু মাদকের কারবার বন্ধ করতে পুলিশ নিজে কতটা সক্রিয়, প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে।